সোমবার চলে গেল পৌষ মাসের শেষ দিন। দেশ জুড়ে পালিত হল মকর সংক্রান্তি। আকাশপানে তাকালে দেখা গিয়েছে রঙিন ঘুড়ি। লাটাই-সুতোর টানে কিশোর সহ বড়রা স্বর মিলিয়েছে ভোকাট্টায়। আপামর বাঙালির ঘরে ঘরে আজ জায়গা করে নিয়েছে নানা স্বাদের পিঠে। আর অন্যদিকে রাঢ় বঙ্গের একাংশ মেতেছে টুসু ভাসানে। টুসু হলো আঞ্চলিক একটি পরব যা সাধারণত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া সহ ঝাড়গ্রাম,পশ্চিম মেদিনীপুরের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যেই অধিক প্রচলিত।আদতে টুসু হলো আদিবাসী কুর্মি সম্প্রদায়ের নবান্ন উৎসব।অগ্রহায়ণের শেষে নতুন ফসল কাটার পর প্রায় একমাস ধরে চলে এই পরব। অবিবাহিত মেয়েরা সারারাত ধরে টুসু গান ও নৈবেদ্য দিয়ে মা টুসু দেবীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে।
টুসু গান গাইতে গাইতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের কুমারী মেয়েরা পার্শ্ববর্তী নদী বা জলাশয়ে মকর সংক্রান্তির দিন ভোরবেলা টুসুর ভেলা ভাসিয়ে তাদের এই উৎসবের সমাপ্তি করে। ভেলা বিসর্জনের পর স্নান করে ঘরে ফিরে এসে সকলে প্রস্তুতি নেয় মাস পিঠে বা মাংস পিঠে তৈরীতে। আসুন জেনে নেওয়া যাক নির্ভেজাল ঐতিহ্যবাহী এই মাস পিঠের প্রণালীটি। মাটির উনুনে কাঠের জ্বাল দিয়ে বসানো হয় কড়াই। তাতে সরষের তেল গরম করতে দেওয়া হয়। তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি, টমেটো কুচি, লঙ্কা বাটা, জিরে বাটা, হলুদ বাটা, আদা ও রসুন বাটা,পরিমাণ মতো লবণ দিয়ে ভালো করে কষানো হয়। মসলা কষানো হলে ছোট ছোট করে কাটা হাড় ছাড়া মুরগীর মাংস দিয়ে রান্না করা হয়। কিছুক্ষণ পর মশলা থেকে তেল ছাড়লে পরিমাণ মতো জল দিয়ে সেদ্ধ করতে দেওয়া হয়। মাংস সেদ্ধ হলে শিলে বাটা গরম মশলা দিয়ে নামানো হয়।
অন্যদিকে একটি পাত্রে পরিমাণ মতো চালের গুঁড়ো নিয়ে তাতে রান্না করা মাংস ও তার ঝোল দিয়ে ভালোমত একটা মন্ড মেখে নিতে হবে। মাখার সময় আলাদা করে জল ব্যবহার করা যাবে না। এরপর একটি শাল পাতার থালায় সরষের তেল মাখিয়ে মন্ডটি থেকে কিছুটা থালায় ভরে ওপর দিক থেকে আরও একটি শাল পাতার থালা ঢাকা দিয়ে বিশেষ আকৃতির একটি মাটির পাত্রে থালাটিকে রেখে ঢাকা দিয়ে দিতে হবে। উনুনের কম আঁচে ১০-১৫ মিনিট রান্না করলেই তৈরী ঝাড়গ্রামের বিখ্যাত মাস পিঠে। এটি বানানসেশ হলেই তাল পাতার চাটাই বা মাদুর বিছিয়ে খুদেরা হামলে পড়ে মাস পিঠে খাওয়ার জন্য। এদের এই সারল্য ও অল্পতে আনন্দ ভাগ করার প্রচেষ্টা আজকের বিষাদগ্রস্ত সমাজকে এক অদ্ভুত বার্তা দিয়ে যায়।
চিত্র ঋণ – চেনা অচেনা ঝাড়গ্রাম-jhargram-শালফুল, লালমাটি N মোর
Discussion about this post