ভারতের যে অঞ্চলটি ঐতিহাসিকভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরলতম নিদর্শন হিসেবে পরিচিত; বিস্ময়করভাবে আজকের টালমাটাল রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েও সেই অঞ্চল সম্প্রীতির আদর্শ বহন করেই চলেছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সারাদেশে কষ্ট, দুঃখ, মৃত্যুর ঢেউ বয়ে গেছিল। সেই অন্ধকার সময়ে নাভা, জিন্দ এবং পাতিয়ালা রাজ্যগুলি সহ সমগ্র পূর্ব পাঞ্জাব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার উন্মত্ততায় আচ্ছন্ন ছিল, তখন একমাত্র পাঞ্জাবের মালেরকোটলা জেলার মালেরকোটলা শহরটিই শান্ত ছিল। যা নিঃসন্দেহে বিরল! আজও সেই শহরটি সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে চলেছে সারা ভারতে।
পাঞ্জাবের মালেরকোটলা জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা বেশ উল্লেখযোগ্য। ফলে, রমজান মাসের রোজা পালন, এবং অন্যান্য আচার পালনও নতুন কিছু নয়। কিন্তু এই ধর্মীয় আচার শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধর্মের মধ্যেই আবদ্ধ নেই। তা হয়ে উঠেছে মানুষের উৎসব। এখানেই মালেরকোটলা হয়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী। ইসলাম সম্প্রদায়ের সদস্যদের রোজা ইফতারের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে হিন্দু এবং শিখ প্রতিবেশীদের মন্দির ও গুরুদ্বারে। আবার মুসলমানরাও হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সদস্যদের রমজানের প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছেন বহু বছর ধরে। এবারেও আর ব্যতিক্রম হয়নি।
বর্তমান সময়ে, যেখানে দেশের বেশিরভাগ মসজিদগুলি জমির দখল নিয়ে আইনি বিবাদে জর্জরিত। সেখানে মালেরকোটলার ধর্মীয় নিরপেক্ষতা প্রকাশ পেয়েছে শহরের মন্দির এবং মসজিদগুলির অবস্থান দিয়েই। শহরের অনেক জায়গায় মন্দির এবং মসজিদের মাঝে রয়েছে মাত্র একটি দেওয়াল, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ চিন্তিত নন বিন্দুমাত্রও। এখানকার স্থানীয়রা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, যে মালেরকোটলা শহরের সঙ্গে গুরু গোবিন্দ সিং এবং শের মহম্মদ খান উভয়ের নামই একইভাবে জড়িয়ে রয়েছে। সেই কারণেই তাঁদের শহর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা থেকে মুক্ত।
Discussion about this post