হিন্দু নববর্ষের সূচনা উপলক্ষে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং গোয়ায় বিশেষ উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে উদযাপিত হয় গুড়ি পড়ওয়া। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের প্রতিপদ তিথিতে এই উৎসব পালিত হয়। পবিত্র এই দিনটি মূলত বিশ্ব সৃষ্টির আদিকাল বলে বিবেচিত হয়, কারণ কথিত আছে যে এই দিনেই ব্রহ্মা দেব সৃষ্টির সূচনা করেন এবং প্রথমবারের মতো সূর্য পৃথিবীর ওপর উদিত হন।
গুড়ি পড়ওয়ার পৌরাণিক প্রেক্ষাপট
পৌরাণিক কাহিনিতে বলা হয়, ত্রেতা যুগে এই দিনে শ্রীরামচন্দ্র দক্ষিণ ভারতের অত্যাচারী রাজা বালিকে পরাজিত করেন এবং সাধারণ মানুষকে তার অত্যাচার থেকে মুক্তি দেন। এই বিজয় স্মরণে তখনকার মানুষজন আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন, রঙিন রঙ্গোলি আঁকেন এবং বিজয়ের প্রতীকস্বরূপ ‘গুড়ি’ উত্তোলন করেন। এই ‘গুড়ি’ আসলে একটি বিজয় পতাকা, যা আজও এই উৎসবের মূল আকর্ষণ।
গুড়ি পড়ওয়ার আঞ্চলিক নাম ও উদযাপন পদ্ধতি
মহারাষ্ট্রে এই উৎসবকে বলা হয় ‘গুড়ি পড়ওয়া’, কর্ণাটকে ‘যুগাদি’, আর অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় একে ‘উগাদি’ নামে চেনে। গোয়া ও কেরালায় কঙ্কণি সম্প্রদায় একে ‘সংবৎসর পড়ও’ বলে পালন করে। প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের কাছে এটি নববর্ষ উদযাপনের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন, যা নতুন সূচনার প্রতীক।
গুড়ি তৈরির রীতি ও তাৎপর্য
গুড়ি তৈরি করার জন্য একটি লম্বা বাঁশের মাথায় উল্টো করে পিতলের কলস বসানো হয়। এরপর সেটিকে উজ্জ্বল রঙের রেশমি কাপড় (লাল, হলুদ বা গেরুয়া) দিয়ে মোড়ানো হয়। সঙ্গে যুক্ত করা হয় আম, আশোক ও ফুলের মালা, যা পবিত্রতার প্রতীক। এই গুড়ি বাড়ির উচ্চ স্থানে স্থাপন করা হয়, যাতে তা দূর থেকে সহজেই দেখা যায়। বিশ্বাস করা হয়, গুড়ি স্থাপন সৌভাগ্য ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
উৎসবের আচার ও আনন্দ
এই দিনে ভোরবেলা মানুষ গঙ্গাস্নানের মতো বিশেষ স্নান সেরে নতুন পোশাকে সজ্জিত হন। বাড়ির প্রবেশদ্বার আমপাতা ও ফুল দিয়ে সাজানো হয়, এবং মাটিতে রঙিন রঙ্গোলি আঁকা হয়। এরপর ভগবান ব্রহ্মার পূজা ও গুড়ি উত্তোলনের মাধ্যমে শুভ সূচনা হয়। পাশাপাশি ভগবান বিষ্ণুরও আরাধনা করা হয়।
গুড়ি পড়ওয়া শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি নবজীবনের প্রতীক, যা মানুষের মনে আশার সঞ্চার করে। ঐতিহ্য ও আধ্যাত্মিকতার মেলবন্ধনে এই দিনটি আনন্দ ও উদ্দীপনার সঙ্গে পালন করা হয়।
Discussion about this post