সাম্রাজ্যবাদ এবং শোষক বুর্জোয়া শ্রেণীর প্রতি তিনি কঠোর হলেও সাধারণ মানুষের প্রতি চে গুয়েভারার ছিল নিখাদ ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হননি তাঁর স্ত্রী-পুত্র-কন্যাও। ২০০৩ সালের নভেম্বরে রুশ-কিউবা মৈত্রী সমিতির আমন্ত্রণে চে-কন্যা আলেইদা গুয়েভারা মস্কো সফর করেন। নামী রুশ পত্রিকা ইজভেস্তিয়ায় আলেইদার একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। সেখানে তিনি চে গুয়েভারার কোমল হৃদয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বলেন বাবা যখন মারা যান তখন তার বয়স ছিল ছয়। তিনি বাবা হিসেবে, স্বামী হিসেবে, সন্তান হিসেবে ছিলেন কোমল হৃদয়ের মানুষ। চে গুয়েভারা যখন বলিভিয়ার গেরিলা যুদ্ধে অংশ নিতে যান তখন তার অনুভূতিতে মৃত্যুর আশঙ্কাও ছিল। স্ত্রী, শিশু সন্তান ও বাবা-মার কাছে তিনি যে চিঠি লিখে যান তাতে সে আভাস পাওয়া যায়। শিশু কন্যা আলেইদার জন্য তিনি যে চিঠি রেখে যান তাতে লেখা ছিল, “আমার ছোট্ট আলেইদা! তুমি অবশ্যই বড় হয়ে উঠবে এবং মাকে বাড়ির সব কাজে সাহায্য করবে। দাদিকেও বাড়ির কাজে সহায়তা করবে। স্কুলে কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে না।”
পুত্র আর্নেস্তো গুয়েভারাকে লিখেন, ‘তুমি বেড়ে ওঠ! বেড়ে ওঠার পরও যদি যুদ্ধ চলতে থাকে তবে আমি আর তুমি একসঙ্গে যুদ্ধ করব। কিন্তু যুদ্ধ যদি থেমে যায় তবে আমি তোমাকে নিয়ে চাঁদে ছুটি কাটাতে যাব। চে গুয়েভারা কতটা স্বাপ্নিক ছিলেন তার চিঠি সে প্রমাণ রেখেছে। মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে যখন তিনি যুদ্ধে যাচ্ছেন, তখনও তিনি পুত্রের কাছে লেখা চিঠিতে বলেছেন, অবসর পেলে তাকে নিয়ে চাঁদে যাবেন। এই মহান বিপ্লবী মৃত্যুর সময় পরিবারের জন্য কয়েকটি চিঠি ছাড়া কিছু রেখে যেতে পারেননি। কন্যা আলেইদা যখন বড় হয়ে ওঠেন তখন তাকে লেখা বাবার চিঠিটা বেশ পীড়া দিত। তিনি ভাবতেন বাবা তাকে রান্নাঘরে বন্দী রাখতে চেয়েছেন আর ভাইকে নিয়ে চাঁদে বেড়াবার কথা ভেবেছেন। তার ধারণা ছিল বাবা হয়তো তার চেয়ে ভাইটিকে বেশি ভালোবাসতেন। কিন্তু কিউবার মন্ত্রীসভা কক্ষে গিয়ে সেই ভুল ভাঙে। ইজভেস্তিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আলেইদা বলেন, মন্ত্রিসভার কেবিনেটে যেখানে বাবা বসতেন সেখানে টেবিলের কাচের নিচে চারটি ছবি আবিষ্কার করি। তার তিনটিতেই ছিল আমার সঙ্গে বাবার ছবি।
Discussion about this post