বীভৎস গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত, বিরাম চাই? হাতে খুব বেশি সময় নেই। কিন্তু মনটা পাহাড় পাহাড় করছে? টালমাটাল মনকে দিশা দেখাতে পারে ছোট্ট একটি অফবিট পাহাড়ি গ্রাম। যার নাম লেপচাজগত। ভূপৃষ্ঠ থেকে যার উচ্চতা ৬৯৫৬ ফিট। পাহাড়ের কোলে ছোট্ট এই গ্রাম আপনাকে দিতে পারে অফুরন্ত শান্তি। নিরিবিলি পরিবেশে একটু সময় কাটিয়ে নিয়ে আসতে পারেন ব্যস্ত কাজে ফেরার শক্তি।
ঘুম থেকে দুটো রাস্তা ভাগ হয়ে গিয়েছে দু’দিকে। একদিকে দার্জিলিং অন্যদিকে সুখিয়াপোখরি। সুখিয়াপোখরি যাওয়ার পথেই একটা ছোট্ট গ্রাম লেপচাজগত। ঘুম থেকে সাড়ে সাত কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে ২০ থেকে ২৫টা মাত্র বাড়ি। প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই পাহাড়বাসী বানিয়ে ফেলেছে হোমস্টে। প্রতিটা হোমস্টে থেকেই রয়েছে পাহাড়ের দৃশ্য দেখার ব্যবস্থা। তাই থাকার চিন্তা একেবারে না করলেও চলে। প্রকৃতি যেন নিজের সর্বস্ব ঢেলে দিয়েছে এ গ্রামের ওপর। যেমন সৌন্দর্য্য তেমন শীতল আবহাওয়া। গোটা বছরে এপ্রিল-মে আর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস নাগাদ অতি প্রত্যাশিত কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মেলে। তবে পাহাড়ের আবহাওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। সৌভাগ্য আর কাঞ্চনজঙ্ঘা পাহাড়ে যেন সমানুপাতিক।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা দিক বা না দিক, দেখার জন্য আরও অনেককিছু রয়েছে। পাহাড়ের পাকদন্ডী ঘেরা পাইনের সারি হাত নেড়ে জানাবে কাছে আসার আমন্ত্রণ। আর লেপচাজগতে রয়েছে এমনই এক পাইন ফরেস্ট। প্রবেশমূল্য মাত্র কুড়ি টাকা। এছাড়াও আঞ্চলিক গাড়ি ভাড়া করে একদিনে ঘুরে আসতে পারেন আরও দুটি জায়গা। প্রথমেই জোরপোখরি লেক। কৃত্রিম লেক হলেও পাইনের সাথে রডোডেনড্রনের মিশেল এক অন্যরকম হাতছানি। এখানকার বিশাল আকাশে রাজ করে বাজপাখি। সেও এক অন্যরকম উপভোগ্য দৃশ্য। ছোটো পাখিদের দেখা যায় না সেভাবে। তবে তাদের কলতানেই ঘুম ভাঙে পাহাড়ের কোলে। সে যাইহোক, আরও একটি দেখার মত জায়গা হলো নেপাল ভিউ সীমানা পয়েন্ট। উচ্চতায় এ স্থান রয়েছে ৭৫০০ ফিট ওপরে। ভারত এবং নেপালের বর্ডার। পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটুখানি জায়গা জুড়ে কয়েকটা দোকান। অসম্ভব ঠান্ডা হাওয়া যেন চাকুর মত ধেয়ে আসে চোখ মুখের ওপর। তবে এই জায়গা সমৃদ্ধ করবে আপনার ছুটিকে।
লেপচাজগত যাবেন কীভাবে? শিয়ালদহ থেকে উত্তরবঙ্গগামী কোনো ট্রেন ধরে পৌঁছে যেতে হবে শিলিগুড়ি। তেনজিং নোরগে স্ট্যান্ড থেকে প্রচুর শেয়ার গাড়ি পাবেন পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য। শিলিগুড়ি থেকে রোহিনী নামক রাস্তা ধরে শুরু হয় যাত্রা। অন্যদিকে চাইলে বড় কোনো গাড়ি বুক করে একটানাও যেতে পারেন। তবে শেয়ার গাড়িতে খরচটা আপনার পকেটের সাথে বন্ধুত্ব অটুট রাখতে সাহায্য করবে। শিলিগুড়ি থেকে কিছু গাড়ি সোজা সুখিয়াপোখরির দিকে যায়। সুখিয়াপোখরি যাওয়ার পথেই পরে লেপচাজগত। নইলে আপনাকে নামতে হবে ঘুম স্টেশনে। আর সেখান থেকেও আপনি পেয়ে যাবেন লেপচাজগতের গাড়ি। শিলিগুড়ি টু ঘুম গাড়ির ভাড়া ২৫০ টাকা এবং ঘুম থেকে লেপচাজগতের খরচ মাত্র ৫০-৭০ টাকা। কম খরচে পাহাড়ের অনুভূতি নেওয়ার জন্য অনবদ্য ঠিকানা লেপচাজগত।
Discussion about this post