কর্মহীনতায় ভুগছে আজকের যুবসমাজ। ‘শিল্প চাই কর্ম চাই’ চারিদিকে মানুষের এই একটাই দাবি। আর সেই চাওয়ার দৌলতেই দিকে দিকে গড়ে উঠেছে কারখানা। গ্রাম হয়ে উঠছে শহরের মতো ঝাঁ-চকচকে শৌখিন। এমনকি গ্রামের সেই সবুজ শীতল দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ, সেটিও কালের হাওয়ায় হারাচ্ছে। তবে কারখানা যে মানুষের কর্মসংস্থানের অবলম্বন সে বিষয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু অসচেতন এবং কর্পোরেট মুনাফা তৈরির মানসিকতা নিয়ে গড়ে ওঠা এই কারখানাগুলোই কিছু ক্ষেত্রে মানুষের কাছে অভিশাপ।
হাওড়া জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম কুলাই। গৌরি গাঙ নামের একটি ছোট্ট নদীর কূলে গড়ে ওঠা এক বসতি। যদিও বর্তমানে সেই নদী শুকিয়ে নয়ানজুলির আকারই নিয়েছে। গ্রামবাসীদের ব্যক্তিগত স্বাধীন জীবিকাতেই একসময় নির্মল আবহাওয়ার পরশও ছিল এই অঞ্চলে। কিন্তু তারপরই দানব হয়ে গ্রামে ঢুকল জিন্দাল স্টীল ও ইন্ডিয়ান টোবাকো, এই দুই কোম্পানি। উন্নয়নের ছোঁয়া তো লাগল! একই সঙ্গে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল কারখানা থেকে হু হু করে বেরিয়ে আসা বিষাক্ত সব তরল। গ্রামের গাছপালা ওই বিষাক্ত তরলে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে মরণাপন্ন। পুকুরের মাছ মরে ভেসে উঠছে পাড়ে। পানীয় জলেও রাসায়নিক পদার্থের সংমিশ্রন ঘটছে। এত কিছুর পরেও রাজনৈতিক দলের মাথারা কারখানা থেকে মাসিক অর্থ পাওয়ায় উদ্যোগের লেশমাত্রও দেখাচ্ছেন না। গ্রামবাসীদের হাজার অভিযোগ সত্ত্বেও কারখানাগুলো একই রকমভাবে তরল বের করে ছড়িয়ে চলেছে দূষণ। গ্রামের সেই নির্মলতা আজ ভয়াবহ দূষণের মুখে ধুঁকছে।
হ্যাঁ, একথাও সত্যি এই কারখানায় গ্রামেরই কিছু মানুষ অস্থায়ী কাজ করে সংসার চালান। এমনকি কারখানার বাইরের চা দোকানগুলোও বেশ ভালোই চলে। আর এই চা দোকানই তাদের রুজি রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। তাই কারখানা বন্ধের ডাক দেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিন্তু পরিবেশের রক্ষার দায়িত্বও যে কারখানা মালিকের নেওয়া উচিৎ তা এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তাই সৌরভ প্রকৃতিবাদীর মতো কিছু পরিবেশ আন্দোলন-কর্মী এগিয়ে এসেছেন প্রতিবাদী ভাষা নিয়ে। বিভিন্ন সরকারি দফতরে ডেপুটেশন লেখাও চলছে। তাঁরা গ্রামবাসীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিরন্তর চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন এই দূষণ থেকে গ্রামকে মুক্তি দিতে।
Discussion about this post