সম্ভবতঃ বিশ্বের বৃহত্তম বাসরুট, লন্ডন থেকে কলকাতা! হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। ব্রিটিশ রাজধানী লন্ডন থেকে আমাদের শহর কলকাতা পর্যন্ত চলত বাস। চালু হয়েছিল ১৯৫৭ সালের ১৫ এপ্রিল। তারপর দীর্ঘ দুটি দশক ধরে একটানা চলেছিল এই পরিষেবা। লন্ডন থেকে প্যারিস হয়ে বেলজিয়াম, পশ্চিম জার্মানি, অস্ট্রিয়া, যুগোস্লাভিয়া, বুলগেরিয়া, তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে পশ্চিম পাকিস্তান। তারপর শেষমেশ ভারতে প্রবেশ। এই ছিল বাসটির দীর্ঘ যাত্রাপথের একটি চিত্ররূপ।
দোতলা বাসটির নাম ছিল ‘অ্যালবার্ট’। ভারতে প্রবেশ করে দিল্লী, আগ্রা, এলাহাবাদ, বেনারস হয়ে অবশেষে কলকাতায় এসে পৌঁছত এই বাস। সম্পূর্ণ যাত্রা পথের সময় লাগত প্রায় ৪৯ দিন। অর্থাৎ যাত্রা শুরুর ৪৯ দিনের মাথায় লন্ডন থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছত অ্যালবার্ট। তবে বাসটির সঠিক ভাড়া কত ছিল, তা নিয়ে তর্কের আর শেষ নেই! কেউ বলেন জনপ্রতি ৮৫ পাউন্ড, আবার কারুর মতে ভাড়া ছিল ১৪৫ পাউন্ড অর্থাৎ আজকের হিসেবে প্রায় ১৪,০০০ টাকা! বাসের ট্যাগলাইন ছিল- “ইয়োর কমপ্লিট হোম হোয়াইল ইউ ট্রাভেল।” অর্থাৎ যাত্রা পথে সেই বাসটিই হয়ে উঠবে আপনার নিজস্ব বাড়ি। ঘরের সব রকম সুযোগ সুবিধাও হাজির ছিল সেখানে। একটি আরামের ঘর, ঘুমোনোর জায়গা, পাখা, হিটার, রেডিও ঠিক কী কী ছিল না সেই বাসে! এছাড়াও পুরো বাসটির ভিতর নরম কার্পেট বিছানো থাকত।
তবে শুধু লন্ডন-কলকাতার রুটই নয়, অন্য আরেকটি রুটেও চলত অ্যালবার্ট বাস। সেটি হল লন্ডন থেকে অষ্ট্রেলিয়া। তবে লন্ডন-কলকাতার যাত্রাপথটিই ছিল সম্ভবতঃ পৃথিবীর বৃহত্তম বাসের রুট৷ মোটামুটি ১৯৭৬ সাল অবধি চালু ছিল এই বিশেষ বাসটির পরিষেবা। এরপর কোনও কারণে বন্ধ হয়ে যায় এটি। তবে কিছু কিছু গাড়ির প্রদর্শনীতে নাকি এখনও দেখা মেলে এই বাসের৷ বাসটির অতীত জানতে তখন আগ্রহী হয়ে ওঠেন উপস্থিত উৎসুক দর্শক। উঠে আসে নানা রঙ-বেরঙের ইতিহাস। তবে কলকাতা তথা ভারতের ইতিহাসের পাতায় এই বাসের কোনও স্থান নেই৷ আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হিসাবে যেন চিরকাল বিস্মৃতই থেকে গেল ‘অ্যালবার্ট’।
Discussion about this post