কলকাতা শহরের বিখ্যাত গয়নার দোকানের নাম বলতে বললে সকলেই চটপট একটার পর একটা নাম বলতে পারবেন নিশ্চয়ই। কিন্তু, দোকান প্রতিষ্ঠার পিছনের সময় আর ইতিহাস জানতে পারলে অবাক হতেই হয় বৈকি! তেমনিই জনপ্রিয় গয়নার দোকান বি সরকার জহুরী। বিশ শতকের শুরুতে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা এসে গয়না বানানো শুরু করেছিলেন আদি প্রতিষ্ঠাতা। তারপর নদীখাত ধরে বয়ে গেছে অনেক জল। আজ অতি পরিচিত নাম বি সরকার জহুরী। তবে মজার কথা, বাংলাদেশে তাঁদের সেই পুরনো বাসস্থানটি আজও দিব্যি টিকে আছে!
মিসরীয়, ব্যাবিলনীয়, আসিরীয়, সিন্ধু সভ্যতার সময় থেকেই নারীর সাজসজ্জার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল গয়না। তবে আমাদের অত পিছনে যেতে হবেনা। ১১৮ বছর পিছলেই দেখব ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন। ভারত এবং বাংলাদেশের বিভক্তির পরিকল্পনা, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা এবং অস্তিত্বের সংকট। অসংখ্য মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারত এবং ভারত থেকে বাংলাদেশ যাওয়া আসা করেছিলেন। কয়েকবছর পর বঙ্গভঙ্গ রদ হয়ে গেলেও, পরবর্তীতে দেশভাগ আটকানো যায়নি। তবে সেই সময় মানুষ হয়ত নিজেদের অবশ্যম্ভাবী অসহায়তাকে আঁচ করতে পেরেছিলেন। সম্ভবত সেই কারনেই বাংলাদেশের যশোর থেকে সরকার পরিবার উঠে এসেছিলেন কলকাতায়। শুরু করেছিলেন গয়নার ব্যবসা।
যশোরের বীশ্বেশ্বর সরকারের দুই পুত্র হাজারীলাল এবং মন্মথভূষণ সরকার ১৬০ নং বৌবাজার স্ট্রীটে তাঁদের গয়নার দোকান শুরু করলেন। নাম রাখলেন বাবার নাম অনুযায়ী বি সি সরকার অ্যান্ড সন্স। এরপর বংশপরম্পরায় পরিবার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক মতানৈক্য, বিবাদ তৈরি হয়েছে। ফলে পরের কয়েক বছরে দোকান বহুবার স্থান পরিবর্তন করেছে। করেছে নাম পরিবর্তনও। আজ সেই দোকানের বহু পরিচিত নাম বি সরকার জহুরী। দোকান আজ একজায়গায় সীমাবদ্ধ নেই। মূল দোকানের শাখা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায়। শিল্পী যামিনী রায়, রাধারাণী দেবী, আশাপূর্ণা দেবী, প্রতিভা বসু, অমলাশঙ্কর প্রমুখ গুণীজনের বাড়িতে স্থান পেয়েছে তাঁদের গয়না।
বাংলাদেশের যশোরের চৌগাছায় সরকার পরিবারের সেই বাড়ি এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। শুধু অক্ষত নয়, বরং বসবাসযোগ্য হয়ে রয়েছে। সেখানে এখন বাস করেন অন্য মানুষ। বিশাল প্রাসাদোপম বাড়ি, খিলান, বাড়ি লাগোয়া বিশাল শানবাঁধানো পুকুর, পুকুরের সামনে বসার জায়গা সমস্তই রয়ে গেছে। নেই শুধু বাড়ির আসল মালিক।
তথ্য ও চিত্রঋণ : বঙ্গ ভিটা
Discussion about this post