মানুষ দেখতে, সমাজের একেবারে নিচের তলার মানুষের জীবনকে বুঝতে এবং সর্বোপরি নিজের অস্তিত্বকে উপলব্ধি করতে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছেন কলকাতার গড়িয়ার বাসিন্দা তথাগত মিত্র। গন্তব্য ২৫০০ কিলোমিটার দূরের লে-লাদাখ। মূল লক্ষ্য নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়। মানুষ এবং প্রকৃতির ভিতর দিয়েই জীবনকে চিনতে শেখা। ২০২১ সাল থেকে পরিকল্পনা করতে করতে ২০২৩ সালে স্বপ্নকে রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন বছর আঠাশের তথাগত। এর জন্য তিনি জমিয়েছেন টাকা, ছেড়েছেন বড়ো বিদেশি কোম্পানির চাকরি। কলকাতা থেকে যাত্রা শুরু করে লাদাখ পর্যন্ত সাইকেলেই ভ্রমণ করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। হিসেব মত এতে তাঁর সময় লাগবে প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট দিন। এই বিশাল কর্মকাণ্ডের পিছনে রয়েছে তথাগত-র পারিবারিক সমর্থন। তথাগত বলছেন, “সাইকেল চালালে আমি বুঝতে পারি ‘আমি আছি’।“
প্রতিদিন নিত্যনতুন অভিজ্ঞতা ঘটছে তথাগতর। তিনি বলছেন, “সর্বহারা তস্য গরিব একটি মানুষও কিভাবে রোজ বেঁচে আছে, কিছুতেই হাল ছেড়ে দিচ্ছে না, প্রতিরোধ করছে, লড়াই করে চলেছে প্রতিনিয়ত, সেটা দেখতেই বেড়িয়েছি।“ তথাগতর মতে প্রতিটি মানুষই আসলে একেকটা গল্প, অভিজ্ঞতা বহন করেন। সেইসমস্ত মানুষের সঙ্গে আলাপ করে কথা বলতে বলতেই তাঁর যাত্রা চলছে পুরো দমে। না চাইতেই মানুষের ভালবাসা পাচ্ছেন। বহু জায়গায় বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষেরা নিজেরাই এগিয়ে আসছেন, থাকা-শোয়ার জায়গা করে দিয়েছেন, দিয়েছেন খাবার। আবার অনেক জায়গায় অন্যরকম ব্যবহারও পেয়েছেন। তবে তথাগতর ঝুলিতে আপাতত ভাল অভিজ্ঞতাই বেশি।
এই বিশাল যাত্রায় তথাগতর সঙ্গে রয়েছে একটি সাইকেল, যার সামনে ‘পলিউশন ফ্রি কান্ট্রি’র প্ল্যাকার্ড। এছাড়া হেলমেট, টেন্ট, জলের বোতল, শোয়া-বসার ম্যাট, আলো, ফোন, হেডফোন। একটি ব্যাগে ভবিষ্যতের জন্য রয়েছে শীতের পোশাক ও জুতো। বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচার জন্য রয়েছে বড়ো প্লাস্টিকের ব্যবস্থা। এই যাত্রার জন্য তিনি মূলত তৈরি হয়েছেন মানসিক ভাবে। তিনি বলছেন, “সাধারণ শারীরিক ফিটনেসের বাইরেও সবচেয়ে জরুরী হলো মানসিক শক্তি। মানসিকভাবে আমি যে কোনো পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে কতখানি মানিয়ে নিতে বা যুঝে নিতে পারছি; সেটাই স্থির করবে আমি এই ধরণের যাত্রার জন্য তৈরি কিনা।“ তথাগতর যাত্রা পথ এখনও অর্ধেকও পেরোয়নি। তবে তাঁর উদ্যম বেড়েই চলেছে। সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি গন্তব্যে ভালো ভাবে পৌঁছবেন, আগামী পঞ্চাশ দিন এই তাঁর একমাত্র লক্ষ্য। এই যাত্রার শেষে আবারও টাকা জমিয়ে তিনি বেরোতে চান নতুন কোনো পথে, নতুন অভিজ্ঞতার সন্ধানে।
Discussion about this post