মধ্যাহ্নের বেশ এক গুরুপাক ভোজনের পর এক বাটি ক্ষীর দই। পেটুক মনটা শুনেই কেমন খাই খাই করছে,তাই তো? তা হোক সে লঘুপাক কি গুরুপাক। ক্ষীর দই আহারের সঠিক নির্ঘন্ট ও নিয়মাবলী বাঙালিকে শেখানোর স্পর্ধা রাখতে নেই। তা সে যতই প্যাকেটজাত ‘ইয়োগার্ট’ এর সমূহ গুণাবলী নিয়ে কর্তারা প্রশংসায় পঞ্চমুখ হোক না কেন মাটির হাঁড়ির টাটকা দই এর কাছে সব নস্যি। তাদের মধ্যে তুলনা টানা কদাপি অনুচিৎ।
এই যেমন গঙ্গারামপুরের ক্ষীর দই। দই এ যে ক্ষীরের স্বাদ এত প্রবল এরকমটা আর অন্য কোথাও পাওয়া দুষ্কর। সেই পুরোনো দিনে মাটির উনুনে দুধ গরম করে রেখে দিলে যেমন দুধের উপরে সরের লাল আস্তরণ পড়ত,ঠিক তেমন রঙ এই দই এর।দই হয়েও “জমে পুরো ক্ষীর!” দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর শহর। খাসা ক্ষীর দই এর আসল ঠিকানা গঙ্গারামপুরের নয়াবাজার এলাকা। রোজ সকালে এ শহর থেকে বাসে করে দই এর হাঁড়ি যায় প্রতিবেশী শহর থেকে জেলায়। এই দইয়ের চাহিদাও প্রচুর। হবে নাই বা কেন! একেবারে খাঁটি গরুর দুধ থেকে যে তৈরী! দুধ ঢিমে আঁচে উনুনে বসিয়ে বাড়িতেই দই প্রস্তুত করেন বিক্রেতারা। সেই দুধ যত আগুনের আঁচে ঘন হবে স্বাদের মাত্রা বাড়বে ততই। তারপর সঠিক অনুপাতে শর্করা যোগে দই প্রস্তুত। তবে মাঝে রয়েছে আরও প্রণালী, সেসব গোপন। আর গোপনেই তো স্বাদ বাড়ে!
দই প্রস্তুত সম্পূর্ণ হলে হাঁড়িতে ভরার পালা। দাম প্রতি কিলো ২০০-২৫০টাকা। প্রতিদিন বাজারে দই এর ঝাঁকা নিয়ে বসেন বিক্রেতারা। বিক্রিও বেশ ভালোই হয়। তাঁরা জানিয়েছেন তাঁদের বাপ ঠাকুরদার আমল থেকে এই দই এর কারবার। অনেকে আবার পসরা সাজান বাইরের শহরেও। উৎসবের মরশুমে সকাল সকাল বাজারে না গেলে একটিও পাবেন না। জামাইষষ্ঠী থেকে ভাইফোঁটা,অন্নপ্রাশন থেকে বিয়ে বাড়ি যে কোনো অনুষ্ঠানে অর্ডার আসে বাইরে থেকেও। এক চামচ দই মুখে দিলে তবেই বোঝা যাবে এই দই আলাদা কোথায় বাকিদের থেকে। তবে দীর্ঘদিন থেকেই দই নির্মাতাদের দাবি, গঙ্গারামপুরের ক্ষীর দইও পাক জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন ট্যাগ। তাহলে বাইরের জেলাগুলোয় আরো জনপ্রিয়তা পাবে ক্ষীর দই।
আরও পড়ুন স্বাদের আসরে মনকাড়া নবদ্বীপের লাল দই, আদরে-আপ্যায়নে আজও বিশ্ব সেরা!
বেশ তো বাড়িতে অনুষ্ঠান হোক বা না হোক, এই গঙ্গারামপুরের ক্ষীর দইয়ের প্রবেশে তো বারণ নেই। মুখে যেতেই মন যেন আপনার থেকেই বলে উঠবে “আহা গো অমৃত!”
Discussion about this post