শিক্ষা সমাজের মেরুদন্ড। আর শিক্ষাদানের পেশা তাই সম্মানের শীর্ষে বলা যেতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠান ছাড়া এও কি সম্ভব কোনোভাবে? হ্যাঁ, এমনই অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছেন কেরালার কাসারগোড় শহরের এক বৃদ্ধা। এলাকার মানুষের কাছে তিনি ‘নারায়ণী টিচারও’ নামে বেশ পরিচিত। তবে তার আসল নাম কে ভি নারায়ণী। কাঁধ থেকে ঝোলে কাপড়ের ব্যাগ, হাতে ছাতা। মাইলের পর মাইল হেঁটে চলেছেন তিনি। তবে কেন? কারণ একটাই, পড়াতে যাওয়া। ভোর বেলা থেকেই শুরু হয়ে যায় তার এই লড়াই। সব কাজ গুছিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন শিক্ষা দানের উদ্দেশ্যে। প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে তার। মূল বিষয় বলতে মালায়লাম, সংস্কৃত, হিন্দি আর ইংরেজি পড়ান তিনি।
ভোর থেকে এক ছাত্রকে পড়িয়ে আবার হাঁটতে শুরু করেন পরের আরেক ছাত্রীর বাড়ি। সারাদিনে এভাবে প্রায় ২৫ কিমি পথ হাঁটেন নারায়ণী টিচার। বিগত পাঁচ বছর ধরে চলছে তার এই কর্মসূচি। ধীরে ধীরে এই পথ হাঁটা তার অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। তার এই শিক্ষাদানের কর্মযজ্ঞ চলে বেশ রাত পর্যন্ত। এ কাজের মাধ্যমে তার জীবন মিশে গেছে প্রকৃতির সাথে। কেউ কেউ তাকে বলে থাকেন, ‘৬৬ বছরের যুবতী’।
তবে কেরালার এই শিক্ষিকা কোনোদিন পা রাখেননি কলেজের দোরগোড়ায়। শুনতে আশ্চর্য হলেও একথা সত্যি। সালটা ১৯৭১। দশম শ্রেণী পাশ করার পর অভাবের তাড়নায় পড়ানো শুরু করেন তিনি। এতদিনের সংগ্রামের আজ এই রূপ। মাত্র ১৫ বছর বয়সে শুরু হয় তার কাজ। কোনোদিনও স্কুলে পড়ানোর জন্য আবেদন করেননি তিনি। টিউশনকেই বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। তবে তার দক্ষিণা অতি সামান্য। কাসারগোড়ের চেরুভাতুর ছোট্ট একটি বাড়িতে তার স্বামীকে নিয়ে ভাড়া থাকেন তিনি। শয্যাশায়ী স্বামীর চিকিৎসা চলে তার এই টিউশন থেকেই। বয়সের ছাপ পড়লেও শেষ নিঃশ্বাস অবধি তার এ লড়াই যে চলবে তা নিশ্চিত।
চিত্র ঋণ – প্রহর.ইন
Discussion about this post