গঙ্গার ঘাট থেকে মোটামুটি ৫০০ মিটারের দূরত্বে পড়ে কাটোয়ার মালো পাড়া। এই মালো পাড়াতেই পুজো হয় ক্ষ্যাপাকালী বা ক্ষেপীমার। প্রায় সাড়ে চারশো বছরের প্রাচীন এই পুজো। প্রতি দীপাবলিতেই মালো পাড়ার দেবী কালী পূজিত হন ক্ষেপীমা রূপে। তবে এই পুজোয় রয়েছে বিশেষ এক আকর্ষণ। পুজোয় দেবী সাজেন মোটামুটি পাঁচ কেজি সোনা এবং নয় কেজি রূপোর গয়নায়। সোনার মুকুট থেকে শুরু করে সীতা হার, বালা সমেত সোনা রূপার তৈরি বিভিন্ন গয়না দিয়ে অলংকৃত হন দেবী মূর্তি।
কথিত আছে একটা সময় ছিল যখন পুলিশের নজর থেকে বাঁচার জন্য এই দেবী মূর্তিকে লুকিয়ে রাখা হত গভীর জঙ্গলে। তার অবশ্য যথেষ্ট কারণ ছিল। আজ থেকে প্রায় কয়েকশো বছর আগে কাটোয়া শহরের ক্ষ্যাপাকালী পাড়া ছিল আসলে ছিল একটি ঘন জঙ্গল। তখন না ছিল এত যাতায়াত সুবিধা আর না গড়ে উঠেছিল জনবসতি। সেই জঙ্গলেই আস্তানা ছিল এক দুর্ধর্ষ ডাকাত দলের। যাদের ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকতো বর্ধমান, নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ সহ বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষজন। সেই ডাকাত দলের সর্দার নিজের হাতেই শুরু করেছিলেন দেবীর পুজো। নিয়ম করে পুজো করতেন দেবী কালীর এবং তারপরই বেরোতেন ডাকাতির উদ্দেশ্যে।
যে দেবীমূর্তিকে একটা সময় লুকিয়ে রাখা হতো পুলিশের নজরের আড়ালে। আজ সেই দেবী মূর্তিই পূজিতা হন কড়া পুলিশি নজরদারীতে। পুলিসের কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থায় দুই দিন ধরে চলে পুজো। ক্ষেপিমার পুজোর দিন শুধু বর্ধমান নয় বরং পাশ্ববর্তী জেলাগুলি থেকেও দেখা যায় ভক্তদের ভীড়। বর্তমানে এই ক্ষ্যাপা কালীতলা গড়ে উঠেছে সার্বজনীন কালীতলা হিসাবে। রীতিমতো ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে হয় সমগ্র পুজোর ব্যবস্থা। নিয়ম আছে দেবী প্রতিমা নির্মাণের পরে মালো সম্প্রদায়ের মানুষের দায়িত্ব থাকে দেবীকে বেদিতে স্থাপন করা। তারপরেই শুরু হয় পুজো। কথায় আছে “বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, তর্কে বহু দূর”, সেই মতো প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ অগাধ বিশ্বাস নিয়ে আসেন ক্ষেপীমার ।
Discussion about this post