বাঙালির শীতকাল মানেই নানা স্বাদের পিঠের সমাহার। পৌষ পার্বণ যত কাছে আসে বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠে তৈরীর আয়োজন। নানা ধরনের বাহারি পিঠে তৈরী শিল্পপ্রেমী বাঙালিরই কীর্তি। পিঠের মধ্যে পরিচিত পিঠেগুলো হচ্ছে ভাপা, চিতই, পোয়া, ছিটকা, চাপড়ি, চাঁদ পাকন, পুলি, চন্দ্রপুলি, পাটিসাপটা, মুগ পাক্কন, মেরা পিঠা, মালাই পুলি, খেজুর কাটা নকশি, কলা পিঠা, খেজুর ঝুরি, ক্ষীর কুলি, রসফুল, দুধরাজ৷ হাত ব্যাথা হল গুনতে গিয়ে?
আরো অনেক আছে। তবে তার মধ্যেই ঝিনুক পিঠে অন্যতম। অনেকে এটিকে খেজুরে পিঠে নামেও চেনে। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, খেতে সুস্বাদু এই পিঠেটি অনেকেরই প্রিয়। যেমন তার নাম। তেমনি এই পিঠে দেখতে অনেকটা ঝিনুকের মতনই। গ্রামে এখনো প্রতি ঘরে শীতের পিঠে তৈরি হলেও শহরের যান্ত্রিকতার ভিড়ে শীতের পিঠে হারিয়ে গেছেই বলা যায়। তবে মজাদার এই পিঠে শহর থেকে গ্রাম সব জায়গাতেই প্রশংসিত। এই পিঠে তৈরি করা খুব সহজ।
চিনি, ময়দা ও চালের গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে নিতে হবে। ভালোভাবে তা দুধ ফুটিয়ে তাতে প্রথমে নারকেল দিতে হবে। ফুটিয়ে এরপর চালের গুঁড়োর মিশ্রণ দিয়ে রুটির মতো ডো করে নিতে হবে। এরপর ছোট ছোট লেচি কেটে সেখান থেকে ছোটো করে কেটে ডিম্বাকৃতির বল বানিয়ে নিতে হবে। এবার একটি বলকে একটি চিরুনির উপর রেখে আর একটি চিরুনি দিয়ে চেপে ঝিনুকের আকৃতিতে মুড়িয়ে নিতে হবে।
তারপর তা ডুবো তেলে গোল্ডেন করে ভেজে নিতে হবে। চিনি, জল ও এলাচ গুঁড়ো একসাথে মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে শিরা তৈরি করতে হবে। তবে শিরা বেশি ঘন হবেনা। এরপর পিঠেগুলো গরম শিরায় ছেড়ে দিলেই তৈরী মিষ্টি ও কুড়মুড়ে ঝিনুক পিঠে। এবার তা ঠান্ডা করে ড্রাই ফ্রুটস দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়ে থাকে।
তাই স্বাদ বদল করতে চাইলে ঝিনুক পিঠের স্বাদ একবার নিতেই পারেন। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্যে পিঠে-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। মুখরোচক খাদ্য হিসেবে পিঠে সমাজে বিশেষ আদরণীয়। সম্পর্কের বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে তুলতে পিঠা-পুলি উৎসব আয়োজনের বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও বর্তমানে সময়ে পিঠের বানিজ্যিক দিকও বেশ উজ্জ্বল। পিঠের কথায় বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়ার লেখা না বললেই নয়, “পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশিতে বিষম খেয়ে, আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।”
Discussion about this post