কথাতেই আছে, ভ্রমণপ্রিয় বাঙালি। সাধ্যমতো খরচে একটা ভালো জায়গায় বেশ কয়েকদিন ছুটি কাটিয়ে এলে আর কি চাই! কিন্তু আজকালকার ব্যস্ততম জীবনে বেশ কিছুদিনের ফুরসত বের করাটাই তো মুশকিল। তারওপর প্রস্তুতির একটা ব্যাপার তো রয়েইছে। এখনকার কাজের মানুষরা তাই একদিন টুক করে একটা ব্যাক-প্যাক সাথে নিয়ে বেড়িয়ে আসার সুযোগটাই খোঁজে। আর খোঁজার জন্যও সময় নষ্টের ব্যাপার নেই। এখন সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে সবকিছুই তো আমাদের হাতের মুঠোয়। এর মাধ্যমেই খোঁজ পাওয়া হাওড়ার মধ্যেই বেশ জনপ্রিয় একটি জায়গা, নাম ‘ঝালুয়ারবেড়’। হাওড়া থেকে আমতাগামী ট্রেনে মাত্র ৪০ মিনিটের রাস্তা। যাওয়ার আগে জেনে নিন জায়গাটির বেশ কিছু বিশেষত্ব।
দক্ষিণের ডুয়ার্স নামে পরিচিত এই অঞ্চলটি প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে একপ্রকার স্বর্গ বলা যেতে পারে। সেখানে একটিই মাত্র রেললাইন। আর তার পাশে প্ল্যাটফর্মটি সবুজে ঘেরা, যেন এক ছবির মত। জনমানবহীন এই নিরিবিলি জায়গাটিতে ঘোর দুপুরেও শোনা যায় ঝিঁঝিঁ পোকার অবিরাম ডাক। স্টেশনে দাড়িয়েই মনে হবে কোনো গহীন জঙ্গলে বোধহয় দাড়িয়ে আছেন। সুন্দর এই স্টেশনের মোহ কাটিয়ে কিছুটা এগোলেই দেখবেন একটা কালী মন্দির। এই মন্দিরে যাওয়ার রাস্তাটির দুপাশ জুড়ে ঘন বাঁশ বন। শুধু তাই নয়, বাঁশ গাছগুলো এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে রাস্তাটিকে ঢেকে রেখেছে। মাঝখান দিয়ে হেঁটে গেলে মনে হবে যেন আস্ত এক বাঁশ গাছের গুহা। দুপুরে সূর্যের আলোটুকুও ভালো ভাবে মাটিতে পৌঁছাতে পারে না। আবার শীতের দিনে কুয়াশা ঘেরা এই রাস্তাটি অপরূপ এক মায়াবি দৃশ্যের সৃষ্টি করে। স্থানীয়রা জানান, সন্ধ্যে নামলে অনেক সময় শিয়াল ও অন্যান্য বন্য জন্তুও বেরোয়। তাই সেসময় রাস্তাটি বেশ বিপজ্জনকও বটে। রাত গাঢ় হওয়ার আগেই এখানে শোনা যায় পেঁচার ডাক।
অন্য দিকে জঙ্গল যেখানে কম সেখানে উপভোগ করার মত রয়েছে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি। খেত জুড়ে বিভিন্ন ফসলের চাষ এবং খেতের মাঝখান দিয়ে রয়েছে কংক্রিটের রাস্তা। স্থানীয়রা বলেন, গোটা এলাকাটাই জঙ্গলে ঘেরা ছিল একটা সময়। পরে বেশ কিছু জায়গা বসবাসের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। তাই এখন জমির দাম বেড়েছে। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে অক্ষুণ্ণ রেখেই ঝালুয়ারবেড়ের মানুষ দিনযাপন করেন এখানে। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত কৃত্রিমভাবে ডুয়ার্সের স্বাদ পেতে এই শীতেই না হয় একবার ঘুরে আসুন দক্ষিণের ডুয়ার্সে। বিশাল এই কংক্রিটের শহরে এক টুকরো বন্যপ্রকৃতি আপনার মনের প্রশান্তি জোগাবেই!
চিত্র ঋণ – সুমন দাস ও সৌভিক মোদক
Discussion about this post