বিশাল প্রতিমা, চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জা ও মনোরম প্যান্ডেল – এই সব মিলিয়েই প্রতিবার জমজমাট হয়ে ওঠে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো। এর পাশাপাশি থাকে রাস্তার দু’পাশ জুড়ে মেলার মতো বসা সারি সারি দোকানপাট। কোনওটি খাবারের, কোনওটি আবার খেলনাবাটির তো কোনওটা হস্তশিল্প সামগ্রীর। প্রতিবার দূর দূরান্ত থেকে আসেন এসব ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এ বছর, এই কো-১৯ এর চোখরাঙানির মধ্যে কেমন আছেন তারা? কেমনই বা চলছে তাদের ব্যবসা?
প্রতিবারের মতো এবারেও শ্যামনগর থেকে এসে মেলায় বাদাম, জিলিপি, নিমকির দোকান দিয়েছেন মন্টু হালদার। সহযোগী হিসাবে রয়েছেন তার স্ত্রী টুলটুল হালদার ও কারিগর হরিপদ সরকার। মন্টুবাবু জানালেন, শুরুতে কেবলমাত্র বাদাম বিক্রি দিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও অনেক পরিশ্রমের ফলে আজকের এই ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন তিনি। প্রতি বছর চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো ছাড়াও রাসের মেলা, রথের মেলা, ঝুলন মেলা, পৌষ মেলায় তাঁরা দোকান দেন। কিন্তু গতবছর মহামারীর কারণে সমস্ত মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন মন্টুবাবু। কোনোরকমে রেশনের চাল ও নামমাত্র সবজি দিয়ে সংসার চালিয়েছেন। এ বছর প্রথমে চিন্তায় ছিলেন তাঁর মতো বহু ব্যবসায়ীরাই, অনেকে আসেননিও। কিন্তু স্থানীয় পূজা কমিটির সদস্যদের দেওয়া ভরসায় সাহস করে মন্টুবাবু ফের চলে এসেছেন চন্দননগরে। মন্টুবাবুর কথায়, দীর্ঘদিন ধরে এই নির্দিষ্ট স্থানেই দোকান দেওয়ার সুবাদে যেন আত্মীয়তা জন্মে গিয়েছে স্থানীয় পুজো কমিটির সদস্যদের সাথে। যদিও কো-১৯ এর কারণে এ বছর বিক্রিবাটা অন্যান্য বারের মতো নয়। তবে তিনি আশাবাদী, দুর্যোগ কেটে গেলে আবার ছন্দে ফিরবে শহর।
কাটোয়া লাইনের অগ্রদ্বীপ থেকে স্বামী ও ছেলেকে সাথে নিয়ে এসেছেন ছবি রাণী ভাস্কর। সঙ্গে এনেছেন নিজেদের হাতে বানানো কাঠের প্যাঁচা, রাধা কৃষ্ণ, গৌর নিতাই, একতারা ইত্যাদির সম্ভার। তাঁর কাছে জানা গেলো, বংশ পরম্পরায় তাঁদের পরিবার দীর্ঘকাল যাবৎ এই পেশায় যুক্ত। স্বামী ভক্ত ভাস্করসহ পরিবারের অন্যান্য পুরুষরা কাঠ খোদাই করে পুতুল বা মূর্তি গড়েন। বাড়ির মেয়ে বৌ-রা তাতে রং করেন। চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা ছাড়াও বছরের অন্য সময়ে তাঁরা পাড়ি দেন দিল্লি, কলকাতা ,আসানসোল সহ বিভিন্ন অঞ্চলের মেলা ও উৎসবে। এই কাঠের মূর্তি নির্মাণ শিল্পই পরিবারের সকলের একমাত্র জীবিকা হওয়ায় মহামারীর সময় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে তাদের পরিবারও। ব্যাঙ্কের জমানো টাকা তুলে চালাতে হয় সংসার। এ বছর আশানুরূপ ব্যবসা না হলেও তিনি চেয়ে আছেন আগামীর দিকে, যখন কেটে যাবে এই অসুখ। থাকবে না আর কোনো বিধি-নিষেধ। মানুষের সাথে মানুষের মেলামেশা হবে অবাধ।
Discussion about this post