ডিজিটাল এই তথ্যসর্বস্ব যুগে প্রযুক্তি আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্মার্টফোন, অ্যাপ, এবং অনলাইন পণ্যগুলি আমাদের তথ্য, যোগাযোগ, বিনোদন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য ও আর্থিক দিকেও প্রভাব ফেলছে। কিন্তু প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রার পাশাপাশি একটি প্রশ্ন বারবার উঠে আসে—আমাদের ব্যক্তিগত ডেটা কতটা সুরক্ষিত? বিশেষত, চীনের কিছু স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ও অ্যাপ নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ ওঠে যে তারা ব্যবহারকারীর ডেটা চুরি করছে বা তাদের গোপনীয়তার প্রতি সঠিকভাবে সম্মান দেখাচ্ছে না। এই ধরনের উদ্বেগ শুধু ব্যক্তিগত স্তরে সীমাবদ্ধ নয়, বরং বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশেষত ভারতের মত দেশের, এই বিষয়ে সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
একটি স্মার্টফোন শুধু ফোনকল বা মেসেজ আদান-প্রদানের মাধ্যম নয়, বরং আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপকে ট্র্যাক করতে সক্ষম একটি জটিল ডিভাইস। আমাদের লোকেশন, সার্চ হিস্ট্রি, ফটো, ভিডিও, এমনকি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত তথ্য পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে সক্ষম এই ধরনের স্মার্টফোনগুলো। আর এইসব তথ্য সুরক্ষিত থাকাটা প্রতিটি গ্রাহকের জন্য অবশ্যই প্রয়োজনীয়। তবে, চীনের স্মার্টফোন কোম্পানিগুলি এইসব তথ্য সুরক্ষার নিয়মাবলী কখনোই বিশেষ মানে না। এমন অনেক অভিযোগ প্রায়শই উঠে আসে, যেখানে দেখা যায় এই কোম্পানিগুলির স্মার্টফোন থেকে গ্রাহকদের অত্যন্ত ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও হ্যাক হয়ে ইন্টারনেটের দুনিয়ায় চলে আসছে। আবার অনেক সময় গ্রাহকদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থার্ড-পার্টি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার অভিযোগও ওঠে এইসব স্মার্টফোন ব্র্যান্ডের বিরুদ্ধে।
এই চীনা ব্র্যান্ডগুলোর ডেটা সংগ্রহের প্রক্রিয়াটা চিরকালই খুবই সন্দেহজনক। এই ডেটাগুলি তৃতীয় পক্ষের কোনো সংস্থার সাথে ভাগ করে নেওয়া হচ্ছে কি না, এবং যদি ভাগ করা হয় তবে তা কি উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে—এসব ব্যবহারকারীদের কোনোদিনই জানতে দেয়না চীনা স্মার্টফোন কোম্পানিগুলি। তবে, শুধু চীনা স্মার্টফোন ব্র্যান্ড নয়, চীনা বেশ কিছু অ্যাপও এই তালিকায় বিদ্যমান, যেগুলোকে এই একই অভিযোগে ব্যানও করেছে ভারত সরকার। এদের মধ্যেই অন্যতম টিকটক, উইচ্যাট, ক্যাম স্ক্যানার।
Samsung তাদের মাল্টিলেয়ার সিকিউরিটি ফিচার Knox ও Apple তাদের iPhone ডিভাইসের Apple সিকিউরিটি নিয়ে বড়াই করে ঠিকই, তবে প্রশ্ন থাকে, শুধু একটি নিরাপত্তা ফিচার দিয়ে কি সব ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব? বর্তমান যুগে যখন সাইবার ক্রাইম এবং হ্যাকিং-এর ঘটনা ক্রমাগত বাড়ছে, তখন ব্যক্তিগত ডেটার সুরক্ষায় প্রতিটি কোম্পানিকেই তাদের প্রযুক্তিকে আরো উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি, সাধারণ গ্রাহককেও থাকতে হবে আরও সতর্ক। টু ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন বা ডেটা এনক্রিপশনের মত সুবিধা ব্যবহার করে নিজের ডেটা সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে আপনাকেই। কারণ গোপনীয়তা এবং ডেটার সুরক্ষা কোনো কম্প্রোমাইজের বিষয় নয়।
Discussion about this post