পা কাটা লোকটা হুইলচেয়ার টানতে টানতে আপনার দিকে এগিয়ে এসে হাত পেতেছে। যতই ব্যস্ত থাকুন কিংবা রুক্ষ মেজাজের হন না কেন একটু হলেও আবেগ তাড়িত হবেনই। হ্যাঁ, হুইলচেয়ারে বসা মানুষদের অসহায় দশাটা মনকে বেশ ভারাক্রান্ত করে। তবুও ওদের ওইটুকু পারাই হয়ত ওদের নিজের জন্য অনেকটা। যার চলার ক্ষমতাটুকু নেই সে ঘুরছে ফিরছে নিজের মতো করে। হাঁটার অক্ষমতার এক অনবদ্য বিকল্প। আচ্ছা কোনোদিন সময় নিয়ে দেখেছেন এই হুইল চেয়ারের প্রযুক্তিটা? দেখলে অবাকই হতেন। আবিষ্কারকের কি অদ্ভুত চিন্তার সমাবেশ রয়েছে এখানে! যদিও আজকের হুইলচেয়ার আর শুরুর দিকের হুইলচেয়ারের ফারাক বিস্তর। তবুও চলুন না আজ একটু হুইলচেয়ারের বিবর্তনের ইতিহাসটা জেনে নেই।
হুইলচেয়ারের ধারণাটি কার কিংবা কে প্রথম এটি তৈরী করেন, এ বলা ভারী মুশকিল। কিন্তু ১৫৯৫ সালে এই পরিচিত ডেডিকেটেড হুইলচেয়ার এক অজানা মানুষ স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফিলিপের জন্য তৈরি করেছিলেন। তখন এর নাম অবশ্য ছিল অবৈধ চেয়ার। এরপর ১৬৫৫ সালে তিন চাকাওয়ালা এক হুইলচেয়ার এল। স্টেফেন ফার্লেলার নামের এক প্যারাজেলজিক্যাল ওয়াচমেকারের হাতেই তৈরী হয় সেটি। বাথ হুইলচেয়ার ১৭৮৩ সালের দিকে ইংল্যান্ডের বাথ নামক শহরে এই হুইলচেয়ারটি আবিষ্কার হয়। ওই শহরের জন ডসনই হলেন এর উদ্ভাবক। দুটো বড় চাকা এবং একটি ছোট চাকা একসঙ্গে রেখে এই চেয়ারটি প্রস্তুত করা হয়েছিল।
বাথ হুইচেয়ার কাজের হলেও খুব একটা আরামদায়ক ছিল না। তাই ১৯ শতকের শেষদিকে অনেকটা উন্নত মানের হুইলচেয়ার তৈরি হল। ১৮৬৭ থেকে ১৮৭৫ সালের মাঝামাঝিতে বাইসাইকেলের মতো রাবার চাকাগুলিকে মেটাল রিমে যোগ করে তৈরী হয় হুইলচেয়ার। ব্রিটেনে এর আরও বিবর্তন হতে থাকে। ১৯০০ সালে প্রথম স্পোকড চাকা হুইলচেয়ারে ব্যবহৃত হয়। আর ১৯১৬ সালে প্রথম মোটর চালিত হুইলচেয়ারটি লন্ডনে আসে।
ভাঁজ হুইলচেয়ার ১৯৩২ এর দিকে ইঞ্জিনিয়ার হ্যারি জেনিংস প্রথম ভাঁজ নলাকার স্টিলের হুইলচেয়ার তৈরি করেন। আজকের ব্যবহারী হুইলচেয়ারের পুরোনো মডেল বলা যায়। সেটি অবশ্য জেনিংস তাঁর এক প্যারালাইজিক বন্ধুর জন্য বানিয়েছিলেন। তিনি জেনিংস নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠাও করেছিলেন যা বহু বছর ধরে বাজারে হুইলচেয়ারের যোগান দিত। পরে এই কোম্পানীর হুইলচেয়ারের দামের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি যদিও শেষ পর্যন্ত আদালতের বাইরেই রফা হয়। মোটরযুক্ত হুইলচেয়ার – বৈদ্যুতিক হুইলচেয়ার এটি স্ব-চালিত হুইলচেয়ার। রোগী নিজেই নিজের চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে কাজ করতে পারবে। যদি রোগী সেটিও করতে না পারে তবে অন্য কেউ হুইলচেয়ার পিছন থেকে ধাক্কা দিলেই এগোবে। মোটর চালিত বা পাওয়ার হুইলচেয়ারে ছোট মোটর-চালিত চাকাগুলি ঘুরলে চেয়ারটি চলে।
প্রথম বিদ্যুৎ চালিত হুইলচেয়ার দ্বিতীয় কানাডার জর্জ ক্লিন এবং তাঁর ইঞ্জিনিয়ার দল তৈরী করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ফিরে আসা আহত বয়স্কদের সাহায্যের জন্য আবিষ্কার হয় এটি। জাতীয় গবেষণা কাউন্সিলে কাজ করার সময় এটিকে প্রকাশ্যে আনা হয়। এভারেস্ট এবং জেনিংস কিন্তু একই সংস্থা। এর প্রতিষ্ঠাতা ভাঁজ হুইলচেয়ার তৈরি করেছিলেন ১৯৫৫ সালে। জন ডোনোগ এবং ব্রাইংয়েট খুব সীমিত গতির রোগীর জন্য একটি অদ্ভুত হুইলচেয়ার আবিষ্কার করেন। যেটিতে রোগী নিজেরাই হুইলচেয়ার ব্যবহার করতে পারবে এবং সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। মস্তিষ্কের জন্য যন্ত্রটি রোগীর মাথায় সংযুক্ত করা থাকে। একটি কম্পিউটারে রোগীর মানসিক আদেশগুলি আসতে থাকে। আর সেই আদেশ মেনে একাই চেয়ারটি চলতে থাকে সয়ংক্রিয়ভাবে।
Discussion about this post