ছোটবেলায় পড়ে আসা ঈশপের গল্পে পরিচয় মিলেছে নানা প্রাণীর নানান বুদ্ধিমত্তার। বিভিন্ন প্রাণীর মুখে কথা ফুটেছে সে গল্পের পাতায়। তবে সত্যিই কি সেসব প্রাণীরা বুদ্ধি ধরে? বিজ্ঞান কিন্তু বলছে সে কথাই। বৈজ্ঞানিকদের মতে, আমাদের চারপাশের বেশ কিছু প্রাণী রয়েছে যারা অনেক বেশি বুদ্ধিমান। গবেষণা বলছে, পায়রাদের পান্ডিত্য নিয়ে কোনো কথা হবে না। ওরা পড়তে পারার সাথে বানান ভুল পর্যন্ত ধরতে পারে। মানুষের চেয়ে ছয় গুণ বেশি স্নায়ু কোষ থাকায় তাদের এই বিরল প্রতিভা।
আগামী দিনের পরিকল্পনায় প্রাণীজগৎ বেশ উন্নতমানের বিষয় হয়ে উঠতে চলেছে। অন্যদিকে, অক্টোপাস তার বুদ্ধিতে শান দিয়েছে প্রবাল প্রাচীরে খাবার খুঁজতে গিয়ে। অজস্র নিউরোনের কারণে এদের এই উন্নতি। আবার আমাদের একেবারে চোখের সামনে আছে আরেক বুদ্ধিমান প্রাণী। কাক, যে কিনা গণণা করতে পারে। লুকিয়ে রাখা খাবার খুব সহজে খুঁজে বের করে ফেলে কাকেরা। নিজেদের আয়নায় দেখে চিনতেও পারে তারা। কাকেদের এই গুণকে আত্মসচেতনতার একটা ডিগ্রি হিসেবে ধরা হয়। আবার মাছেদের ক্ষেত্রে জানা গিয়েছে, তারা নিজের প্রতিচ্ছবি দেখে চিনতে পারে। খুদে ক্লিনার মাছ আয়নায় নিজেকে দেখে লড়াই করতে চায়। আবার উল্টে সাঁতার কেটে দেখে নেয় ব্যাপারটা কী! বিজ্ঞানীদের দেওয়া চিহ্ন তারা আয়না দেখে মুছে ফেলে। মাছেরা বুঝে গেছে আয়নার কাজটা আসলে কি! সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, সামুদ্রিক প্রাণীরা সমস্যা সমাধানের কিছু উপায়ের ওপর নির্ভর করে। আর এ উপায় ঠিক করা থাকে আগে থেকেই। যেরকম বুদ্ধিমান ধরা হয় ডলফিনকেও। পরিবেশের সাথে খুব সহজে মিশে যায় এরা।
এদিকে কুকুর আর বিড়ালের মধ্যে কে বেশি বুদ্ধিমান? তা দেখতে গেলে দেখা যায়, বুদ্ধির দিকে বিড়ালের আগ্রহ যথেষ্ট কম। কুকুর বরং জটিল কাজে সাহায্য করে তার মালিককে। তুলনায় দেখা যায়, কুকুর শূকরের চেয়েও বেশি বুদ্ধিমান। আবার হাতির কথাও বাদ দিলে চলে না। কেনিয়ার অ্যাম্বোসেলি ন্যাশনাল পার্কের হাতিরা শনাক্ত করতে পারে হুমকির আওয়াজ। এছাড়াও শিকারি মাসাই গোত্রের হাতিরা বুঝতে পারে মানুষের কন্ঠ। অন্যদিকে, ঘোড়া আবার বন্ধুত্বপূর্ন মানুষের মুখ চিনতে পারে। তার তুলনায় ছাগল এক ধাপ এগিয়ে। তারা দলবদ্ধ প্রাণী হওয়ায় বুঝতে পারে অন্যান্য প্রাণীর মানসিক অবস্থা। তথ্যগুলো থেকে বোঝাই যাচ্ছে প্রাণীদের বুদ্ধিমত্তার গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী।
প্রাইমেটোলজিস্ট ফ্রান্স ডি ওয়াল বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, “মানুষ সব সময়ে বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা গণনার উপর ভিত্তি করে তৈরি করেছে। কিন্তু অনেক প্রাণীর ক্ষেত্রে বেঁচে থাকতে গেলে গণণার ক্ষমতার প্রয়োজন নেই।” শিম্পাঞ্জীর আর মানুষের ডিএনএ ৯৮% এক। তবে আসল পার্থক্য একে অপরের থেকে শেখার ইচ্ছেয়। তবে কর্মক্ষমতায় এখনও অবধি মানুষকে পুরোপুরি টেক্কা দেওয়ার মত বুদ্ধিমত্তা কোনো প্রাণীতে পাওয়া যায়নি।
Discussion about this post