ব্যবসা করার উপায় ভাবতে গেলে বেশ মগ্ন হতে হয়। তবে সেই ব্যবসার উপায় যখন সময় কাটানোর কালে আসে, তখন একেবারে কেল্লা ফতে! ঠিক এভাবেই ব্যবসা ফেঁদে বসেছিলেন ফ্রেডরিক টিউডর। শোনা যায়, দুই ভাই বসে আইসক্রিম খাচ্ছিলেন। আর তখনই ফ্রেডরিকের মাথায় খেলে যায় বরফের ব্যবসার কথা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উত্তরের শহর বোস্টন, নামটা প্রায় সকলেরই চেনা। সেই বোস্টন এবং নিউ ইংল্যান্ডের বিভিন্ন হ্রদ থেকে বরফ তুলে অন্য জায়গায় পাঠানোর উপায় খুঁজতে থাকেন ফ্রেডরিক। কারণ তিনি ছিলেন বোস্টনেরই বাসিন্দা। প্রথম দিকে তেমন উপায় না পেলেও হাল ছেড়ে দেননি তিনি। আর অক্লান্ত চেষ্টার ফলেই ১৮৩৩ সালে বস্টন থেকে কলকাতায় পৌঁছল স্বচ্ছ বরফ। যা ছিল সরাসরি পানীয়ে ব্যবহার করার জন্য। তার আগে অবশ্য বরফ আসতো না এমনটা নয়। হুগলির চিনসুরা এক বরফকল থেকে আসতো বরফ। তবে তা ছিল অপরিষ্কার জলে বানানো। পানের খুব একটা উপযুক্ত ছিল না।
যদুনাথ ভবন মিউজিয়াম ও রিসোর্স সেন্টারের এক আলোচনার বিষয় ছিল কলকাতার ইতিহাস। তখনই এই দিকটি তুলে আনেন ন্যাশভিলের বেলমন্ট ইউনিভার্সিটির অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ক্রিস্টিন রজার্স। প্রায় ১৬ হাজার মাইল পেরিয়ে বরফ আসতো এ শহরে। জাহাজে করে চলতো বরফের আমদানি রপ্তানি। ‘টাস্কানি’ নাম ছিল সেই জাহাজের। বোস্টন থেকে রওনা দেওয়ার সময়ে জাহাজে বরফ ছিল প্রায় ১৮০ টন। এ প্রান্তে এসে পৌঁছতে গিয়ে তা গলে প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। যদিও চারটে বড় বরফের পাত দিয়ে ঢেকে, তাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যাবস্থা ছিল সে জাহাজে। কাঠের গুঁড়ো, খড় ও ট্যান ইত্যাদি ব্যবহার করে বিশেষ ঘরটি তাপনিরোধক করা হয়েছিল। ফ্রেডরিকের এই বরফের তখন দাম ছিল পাউন্ড প্রতি চারআনা। আবার কখনও জাহাজ আসতে দেরি হলে টান পড়তো জমা বরফে। তখন বরফ রেশনিং করে বিলি করা হতো। তার জন্য অবশ্য দেখাতে হতো ডাক্তারি সার্টিফিকেট।
পরবর্তীতে জাহাজের বরফ শহরে ঠিক মতো মজুত করে রাখার জন্য তৈরি হয় ‘আইস হাউস’। ক্রিস্টিনের মতে, হিমালয় থেকে বরফ আনার তুলনায় অনেক কম খরচ হতো বোস্টন থেকে বরফ আনার ক্ষেত্রে। প্রায় পাঁচ দশক ধরে চলার পরে, ১৮৭৮ সাল নাগাদ এই ব্যবসার দিন ফুরিয়ে আসে। জাহাজে করে বরফ আসা বন্ধ হয়ে যায়। ইতিহাসের সব চিহ্ন মুছে গেলেও বস্টনে এখনও চলে বরফের ব্যবসা। গ্রীষ্মে সেখানে এই বরফের আইসক্রিমেই জমে ওঠে মুহূর্ত।
প্রচ্ছদ চিত্র ঋণ – dailyhive.in
Discussion about this post