উৎসবপ্রিয় বাঙালির আরেক পার্বণের মাহেন্দ্রক্ষণ এসে উপস্থিত বাঙালির আঙিনায়। তা হল রথযাত্রা। আষাঢ় মাসে আয়োজিত অন্যতম প্রধান এক উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন গ্রামে নিজস্বতা বজায় রেখে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহ্যও। এমনই এক ঐতিহ্য তথা ইতিহাস জড়িয়ে হাওড়া জয়পুরের ঝিখিরা গ্রামের মল্লিক বাড়ির রথযাত্রায়।
এ বছরেই পায়ে পায়ে ১২৭-এ পড়ছে ঝিখিরার মল্লিক বাড়ির রথযাত্রা। ১৮৯৬ খ্রীস্টাব্দে শ্রী হরিনারায়ন মল্লিকের হাত ধরে এই রথযাত্রা শুরু হয়েছিল। এখনও রথযাত্রার মূল উদ্যোক্তা ওই পরিবারই। বর্তমানে মল্লিক বাড়ির সদস্য অতনু মল্লিক এই ঐতিহ্য বহন করে নিয়ে চলেছেন। এখানকার রথযাত্রার স্বতন্ত্র এক বৈশিষ্ট্য উৎসবটিকে আরও ঐতিহ্যময় করে তুলেছে। জানতে চান কী সেই বৈশিষ্ট্য? এখানে জগন্নাথ নয়, মল্লিক বাড়ির ইষ্ট দেবতা দামোদরকে রথে বসিয়ে রথের রশিতে টান দেওয়া হয়। কাঠের তৈরি নয়নাভিরাম রথটি উচ্চতায় প্রায় ৪০ ফুট। রশির সাহায্যে গ্রামবাসীরা রথ টেনে আনেন ৫০০ গজ দূরে। উল্টো রথ পর্যন্ত এখানেই থাকে রথটি।
পারিবারিক এই রথযাত্রা পরিণত হয়েছে সার্বজনীন উৎসবে। রথযাত্রার মাহাত্ম্য চারিদিকে যেমন ছড়িয়েছে তেমনই সুষ্ঠুভাবে তা সম্পন্ন করার জন্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে তৈরি হয়েছে রথ পরিচালন সমিতি। উৎসবের মূল আকর্ষন পুতুল নাচ ও মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে হাওড়া, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন আট থেকে দশ হাজার দর্শনার্থীর সমাগম ঘটে এই চত্ত্বরে। হাওড়ারই শ্যামপুর থেকে আসে পুতুল নাচের দলটি। বিনা পয়সার পুতুল নাচ দেখতে ভিড় করেন আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। এক সময়ে মেলায় আসত কৃষ্ণযাত্রা, রামযাত্রার মতো লোকসংস্কৃতির মাধ্যমগুলি। রথ পরিচালন সমিতির সম্পাদক হরিপদবাবুর আক্ষেপ, “কালের নিয়মে লোকসংস্কৃতির এইসব মাধ্যম প্রায় লুপ্ত হয়ে গিয়েছে। এখন টিকে আছে শুধু পুতুল নাচ।” খাবার, খেলনা,গাছ-পালা ইত্যাদি নানা কিছু নিয়ে মেলায় কমপক্ষে স্টলের সংখ্যা ২৫০-৩০০ তো হবেই!
জাঁকজমক কমলেও উৎসবের আয়োজনে ভাঁটা পড়তে দেয়নি মল্লিক পরিবার ও রথ পরিচালন সমিতি। গত বছর করোনার করাল গ্রাস রথের চাকাকেও অচল করে রেখেছিল। তবে আশা করা যায় এ বছর আবার স্বমহিমায় ফিরবে ‘মন্দিরের গ্রাম’ খ্যাত ঝিখিরার মল্লিক বাড়ির রথ। কলকাতা কিংবা হাওড়া থেকে খুব একটা দূরে নয় এই গ্রাম। ঝিখিরার মল্লিক বাড়ির বিখ্যাত এই রথযাত্রায় সাক্ষী থাকতে পারেন আপনিও।
চিত্র ঋণ – কুন্তল পোড়ে, শুভাশিস মান্না
Discussion about this post