যখন প্রথম ঈদের প্রচলন চালু হয়, তখন এখনকার ঈদের মতো জাঁকজমক ছিল না। নবীজি হজরত মহম্মদ ইসলামের প্রধান উৎসব ঈদের প্রচলন করেন। তিনি ঈদের দিনে স্নান করে ভালো পোশাক পরে নামাজ পড়তে যেতেন। ঈদের নামাজের পর মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া এবং আত্মীয় পরিজন, প্রতিবেশী বন্ধুদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজ ছিল। আনাস নামের নবী মুহাম্মদের একজন সাথীর বর্ণনা করা একটি হাদিসের উদ্ধৃতি থেকে জানা গিয়েছে, মদিনায় যাওয়ার পর নবী দেখলেন যে সেখানকার মানুষ বছরে দুইটি বড় উৎসব পালন করে। নবীজি তখন জানতে চান, সেগুলো কী উৎসব? এগুলো ছিল নওরোজ এবং মিহিরজান নামে দুটি উৎসব। যেগুলো সেখানকার বাসিন্দাদের ধর্ম অনুযায়ী একটি শরতে এবং আরেকটি বসন্তকালে উদযাপিত হত। তখন ওই দুইটি উৎসবের আদলে মুসলমানদের জন্য বছরে দুইটি ধর্মীয়, সামাজিক এবং জাতীয় উৎসব পালনের রীতি প্রবর্তন করা হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে ঈদের প্রচলন শুরু করেন মুঘল সম্রাট বাবর। শবে বরাতের পর মুঘল সম্রাটরা প্রতিদিন রাতে ঘোড়া বা হাতির পিঠে চেপে ঘুরতে বেরোতেন। উদ্দেশ্য ছিল রমজানের চাঁদ দেখা। রমজান মাসের পরেই আনন্দের ঈদ-উল-ফিতর। রোজার চাঁদ দেখা গেলে কামানে গুলি ছুড়ে সাধারণ মানুষকে জানানো হতো। একমাস পর ঈদের চাঁদ উঠলে কামানে গুলি ছুড়ে, বাজি পুড়িয়ে চাঁদ রাত পালন করা হতো। ঈদের সকাল নামাজ পরার মাধ্যমে শুরু হতো। এরপর সম্রাট মহলে হতো মিষ্টি বিতরণ, খাওয়া দাওয়া আর বিভিন্ন উৎসব। তবে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ঈদের উদযাপন শুরু হয় অনেক দেরিতে। আগে অনেক জায়গায় ঈদের নামাজ কীভাবে পড়তে হয়, সেটাও অনেকে জানতেন না। মসজিদের সংখ্যাও সে সময়ে কম ছিল। উপমহাদেশে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ঈদ উদযাপনের পরিধি বেড়েছে। বর্তমানে ঈদে যেমন ব্যাপক উৎসব হয়, তার শুরুটা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র হবার পর। তার আগে শুধু ঢাকায় ঈদ উদযাপন হতো।
মুঘলরা ঢাকায় এসেছিলেন ১৬১০ সালে। তারপরই প্রথম ঢাকায় ঈদ পালন শুরু হয়। মুঘলদের পাঠানো নায়েব-নাজিমরা ঈদ উদযাপন করতেন। ঈদের দিন সবাই একসঙ্গে নামাজ পড়তেন। নামাজ পড়ে ফেরার পথে হাতি বা ঘোড়ার পিঠ থেকে তারা সাধারণ মানুষের দিকে পয়সা ছুঁড়ে দিতেন। ঈদ তখন সেই উচ্চবিত্তদের মধ্যেই উদযাপিত হত। সাধারণ মানুষের তার সাথে সংযোগ ছিল না বলাই ভালো। সে সময় দিল্লির অনুকরণে ঢাকায় ঈদের মিছিল হতো। ধানমন্ডি ঈদগাহ মুঘলদেরই তৈরি।
নতুন চাঁদ ইসলামী শাওয়াল মাসের আগমন এবং ঈদের দিনকে ইঙ্গিত করে। একমাস রমজানের পর চাঁদ রাত মুসলিমদের দোয়া কবুল হবার রাত। টিভি বা রেডিওতে চাঁদ ওঠার ঘোষণা হলেই শুরু হয় উৎসব। পরিবার ও বন্ধুরা নতুন চাঁদ দেখার জন্য খোলা জায়গায় জড়ো হয়। একবার যখন চাঁদ দেখা যায়, তখন লোকেরা একে অপরকে চাঁদ রাত মোবারক বা ঈদ মোবারক জানায়। নামাজ পরে দোয়া করেন সকলে। মেয়েরা মেহেন্দি দিয়ে তাদের হাত সজ্জিত করে। শুরু হয় ঘরোয়া উৎসব। বাড়ির মহিলারা ঈদের জন্য মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য বানায়। লোকেরা শেষ দফায় কেনাকাটা করে। শহরের রাস্তা এবং দোকানগুলো উজ্জ্বল আলোতে সজ্জিত হয়। এই রাতে বাজারগুলো গভীর রাত অবধি খোলা থাকে। চলে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। এই রাতটি বড়দিনের প্রাক্কালের সাথে তুলনীয়।
Discussion about this post