জঙ্গল তখন আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে। একের পর এক এলাকা নিমেষের মধ্যেই ছাই হয়ে চলেছে। বন্য প্রাণীরা তাদের জ্যান্ত শরীরটা বাঁচাতে ছুটছে তীব্র বেগে। না, এটা কোনো সিনেমার গল্প নয়। গত মঙ্গলবার থেকে চোখের সামনেই ঘটেছে এই ঘটনা পুরুলিয়া-বাঁকুড়া পাহাড় জুড়ে। বাঘমুণ্ডি, অযোধ্যা, মাঠা, আপার ড্যাম, বামনী জলপ্রপাত সংলগ্ন অঞ্চল সহ আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা। এই ভয়াবহতা চলেও প্রায় এক সপ্তাহ ধরে।
এই অঞ্চলের শুষ্কতার পরিমাণ ভীষণ রকম। তাই প্রতিবারই এমন বুনো আগুন ছড়ায় জঙ্গলে। কিন্তু তার স্থায়িত্ব খুবই কম। আর এবার যেভাবে এতদিন ধরে আগুনের খেলা চলল সেটা যথেষ্ট সন্দেহজনক স্থানীয়দের কাছে। তাঁদের মতে মানুষের অসচেতনতাই এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। পাহাড়ের রাস্তা দিয়ে চলা মানুষরাই অনেকসময় ধূমপানের পর সেই জ্বলন্ত আগুন ছোঁড়ে শুকনো পাতায়। তা থেকেই হয়তো আগুনের উৎপত্তি বলে অভিযোগ আনছেন পাহাড়প্রেমী স্থানীয়রা।
তবে পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। ওই অঞ্চলের বন কমিটি ব্যাপকভাবে সক্রিয় ছিল ওই কটা দিন। দমকল আনানো হয়েছিল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট থেকে। এদিকে স্থানীয় যুবকরা আগুনে ঝলসানো গাছগুলোর চারপাশ থেকে শুকনো পাতাগুলিকে প্রায় ৬ ফুট থেকে ৮ ফুট দূরত্বে সরিয়ে ফেলেন চটজলদি। এরফলে ক্রমপর্যায়ে ছড়িয়ে পড়া আগুন অর্থাৎ ফায়ার চেনটা ব্রেক হয়। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব এখনও পর্যন্ত হয়ে ওঠেনি। তবে এক সপ্তাহ ধরে চলা এই ঘটনায় ক্ষয়ের বিশালতা কতটা তা আন্দাজ করাই যায়। চেষ্টা চলছে সবুজ পুনরুদ্ধারের। তবে চাই কড়া আইন ব্যবস্থা ও গ্রাম্য সচতেনতা বৃদ্ধি। নাহলে ভবিষ্যতে প্রকৃতিহীন এক বাসভূমিতেই পড়ে থাকবে আমাদের মরদেহগুলো।
Discussion about this post