“এক্কা গাড়ি খুব ছুটেছে/ ওই দেখো ভাই চাঁদ উঠেছে।” অ-আ-ক-খ এর সেই আধো আধো বয়স থেকেই যেন এক্কাগাড়ির সাথে আমাদের পরিচয়টি ঘটেছে। তারপর যখন পা পড়ল শহরের ওই শৌখিন রাজপথে, চোখের সামনে দিয়ে টগবগিয়ে ছুটে চলেছে এক্কাগাড়ির ঘোড়সওয়ারি। সত্যি বলতে ওলা-উবেরের যুগে দাঁড়িয়ে ঘোড়ার গাড়ি ব্যপারটা যেন বেশ ব্যাক ডেটেড। এক্কাগাড়ির অস্তিত্ব এখন ওই শখের খুঁটিতে পোঁতা আভিজাত্য মাত্র। পরম্পরা বেঁচে থাকলেও প্রয়োজনটি ফুরিয়েছে অনেক আগেই। তবে ঢাকা শহরের রাস্তা জুড়ে আজও বেশ মেজাজে ছুটে বেড়ায় এই ঘোড়ার গাড়ি। চলুন আজ তবে সেদিকেই একটু নজর ফেলা যাক।
১৯৪৭ সালে বাংলা দ্বিখণ্ডিত করার পূর্বে দুই বাংলার শিক্ষা সংস্কৃতি, ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিলো কলকাতা। যেহেতু তৎকালীন শহর কলকাতায় দুই বাংলার মানুষের যাওয়া আসার চাপ ছিলো বেশি সেহেতু কলকাতা শহরে ট্রাম, রেল, মোটর যানের যতোটা আধিক্য ছিলো সেই তুলনায় পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকা ছিলো ছিমছাম পরিপাটি। ঢাকায় যান্ত্রিক কোলাহলের আধিপত্য ছিলো বেশ কম। তখন ঢাকা শহরের অন্যতম বাহন ঘোড়ার গাড়ি। ঢাকার গুলিস্তান, ওয়ারী, গেন্ডারিয়া, তাঁতি বাজার, বংশাল, সূত্রাপুর, নারিন্দা, লালবাগ, রায় সাহেব বাজার, শাঁখারী বাজার, স্বামীবাগ, হাটখোলা, পাটুয়াটুলী, টিকাটুলি, লক্ষীবাজার, ফরাশগঞ্জ, জিঞ্জিরা হয়ে বিক্রমপুর, নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ঘোড়ার গাড়িতে যাওয়া যেতো। যদিও ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন আগের চেয়ে অনেক কমেছে। কিন্তু এখনও ঢাকার রাজপথে চলছে এই ঘোড়ার গাড়ি যাকে বলা হয় ‘টমটম’। ১৮৫৬ সালে সিরকো নামীয় একজন আর্মেনীয় প্রথম ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন করেন। যা তখন ‘ঠিকা গাড়ি’ নামে পরিচিত ছিল।
ঘোড়ার গাড়ি হল রাজকীয় ঐতিহ্যের একটি অংশ। অতীতে রাজা-বাদশাহ, অভিজাত শ্রেণি এবং জমিদাররা ঘোড়ার গাড়িকে ইচ্ছে মতো যে কোন কাজে ব্যবহার করতেন । এছাড়াও ঘোড়ার গাড়ি ছিল রণাঙ্গনের রসদ সরবরাহের প্রধান বাহন। প্রথম দিকে শুধু অভিজাতরা এর ব্যবহার করলেও পরবর্তীতে সাধারণ মানুষও এর ব্যবহার শুরু করে।
সম্পাদনা – অনন্যা করণ
Discussion about this post