আজকের দিনে দাড়িয়ে পুরুলিয়ার কথা বললে সকলের কাছেই নামটা খুব পরিচিত। কিন্তু তার মধ্যে ‘কাশীপুর’ জায়গাটির নাম অনেকের কাছে প্রায় অচেনা। তবে এই জায়গাটিতে কোনো এক সময়ে শুধু রাজবাড়ি ছিল তাই না ছিল পঞ্চকোট রাজার রাজধানী। শুধু তাই না কাশীপুর শুধুমাত্র ঐতিহাসিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়; অত্যন্ত সংস্কৃতিমনস্ক একটি স্থান বটে।
এই রাজবংশের ইতিহাসে ঢুকলে দেখা যাবে মধ্যপ্রদেশের উজ্জ্বয়িনীর ‘ধারানগর’ স্টেট থেকে পঞ্চকোট রাজবংশের উত্তরাধিকারীরা এসেছিলেন পুরুলিয়ায়। এই রাজবংশকে ‘শিখরভূম রাজবংশ’ও বলা হয়ে থাকে। ১৮৩২ সালে হুড়ার কেশরগড় থেকে রাজধানী দ্বারকেশ্বর নদের ধারে কাশীপুরে নিয়ে আসে। পঞ্চকোট রা জগজীবন সিংহ দেও ।এটি তাদের সপ্তম তথা শেষ রাজধানী। কাশীপুরে এই বংশের সাত রাজা জগজীবন, নীলমণি, হরিনারায়ণ, জ্যোতিপ্রসাদ, কল্যাণী প্রসাদ , শঙ্করীপ্রসাদ, ভুবনেশ্বরী প্রসাদ রাজত্ব করেছিলেন। মহারাজ জ্যোতিপ্রকাশ সিংহ দেও ১৯১৬ সালে চীন থেকে রাজমিস্ত্রি এনে এই রাজবাড়ী তৈরি করেন। টানা ১২ বছর ধরে এই রাজবাড়ির নির্মাণ কাজ চলেছিল। শোনা যায় বেলজিয়াম থেকে বিশাল ঝাড়-লন্ঠন নিয়ে এনে লাগিয়েছিলেন প্রাসাদের দরবার হলে।
সাতজন রাজত্ব করলেও কাজকর্মের নিরিখে উপরের দিকে দুই রাজা নীলমণি ও জ্যোতিপ্রসাদের নাম উঠে আসে। তৎকালীন মানভূম বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজে তাদের দান ও সাহায্যের কথা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। সিপাহী বিদ্রোহের সময় তাঁর নেতৃত্বেই পুরুলিয়া ট্রেজারি লুঠ হয়েছিল। তিনি জেল ভেঙে ৬৩ জন কয়েদিকে মুক্ত করেছিলেন। কেশরগড় এলাকার সাঁওতাল সম্প্রদায় এই আন্দোলনে তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। ভীত হয়ে সাহেবরা পুরুলিয়া থেকে রঘুনাথপুর হয়ে রানীগঞ্জে পালিয়ে গিয়েছিলেন। এই সময়ে পুরুলিয়া তিন মাস ব্রিটিশ প্রশাসনে মুক্ত ছিল। পরে পুলিশ নিয়ে এসে ক্যাপ্টেন ওকস্ নীলমণিকে গ্রেফতার করেন।
বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত সঙ্গীত অধ্যাপক এ জগচ্চন্দ্র গোস্বামী, মৃদঙ্গবদিক হারাধন গোস্বামী, বংশীবাদক, পুরান সিংহ ,চৌতাল বা নবদ্বীপের প্রমুখের মত পণ্ডিতদের তিনি তার রাজসভায় নিয়ে আসেন। অন্যদিকে জানা যায় মধুসূদন দত্ত কিছুকাল রাজা নীলমণির আইন উপদেষ্টা হয়েছিলেন। এই বাড়িতেই রাজ পরিবারের বর্তমান বংশধররা থাকেন। সাধারণ মানুষ সারা বছর ঢোকার অনুমতি পায় না; শুধু পুজোর সময় রাজবাড়ির একাংশ সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। রাজবাড়ির আজ ভগ্নদশা তবুও এখনো পুরুলিয়ায় ভ্রমণপিপাসুদের ভ্রমণতালিকার প্রথমদিকেই রয়ে গেছে কাশীপুরের রাজবাড়ি।
Discussion about this post