ছবিঃ প্রতীকী
পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর থানার আড়রা গ্রাম। মিশ্র পরিবারের দুর্গাপুজো। ৩২২ বছরের পুরনো ঐতিহ্য। বিশ্বাস করা হয়, পরিবারটি প্রায় ১৬৫০ সালের কাছাকাছি সময় উত্তর ভারতের কনৌজ থেকে মুঘল অত্যাচার থেকে রক্ষা পেয়ে এসেছিল। পুরুলিয়ায় স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে উঠেছিল তার পরেই। তারপরেই দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন রাজারাম মিশ্র। মিশ্র পরিবারের অন্যতম এক সদস্য। তাঁর হাত ধরেই এই পুজো একটি ধারাবাহিক রীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
মিশ্র পরিবারের এই পুজোর মধ্যে রয়েছে কিছু অদ্ভুত রীতি, আর জড়িত আছে ইতিহাস। পরিবারে সংরক্ষিত রয়েছে ‘রামচরিত’ ও ‘চণ্ডী’ নামের দুটি অমূল্য পুঁথি। এগুলি লেখা হয়েছিল হরিতকী পুড়িয়ে তৈরি করা কালি দিয়ে। পুঁথিগুলি সম্ভবত এক শতাব্দীরও আগের। পুঁথির নির্দেশনা মেনেই আজও পুজোর সময় সমস্ত আচার-অনুষ্ঠান, নিয়ম পরিচালিত হয়। এই পুজোতে দেবী দুর্গার সঙ্গে পুজিত হয় পরিবারের দুটি ঐতিহাসিক তরোয়াল। যার একটি পরিবারের পূর্বপুরুষরা কনৌজ থেকে এনেছিলেন, আর অন্যটি পঞ্চকোট রাজবংশ থেকে পাওয়া উপহার।
পুজোটি কেবল পারিবারিক আচার নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে গোটা গ্রামের লোকসঙ্গীত, নাচ-গান, হস্তশিল্পের বিকাশও। পরিবারের মহিলারা বিশেষ ভাবে পুজোর সময় দায়িত্ব নেন। পুজোর ভোগ রান্না, অর্চনা ও আয়োজন বেশিরভাগই মেয়েদের দায়িত্বে। এমন একটি জনশ্রুতিও আছে যে, বংশে কন্যাসন্তান আসার আশা থেকেই রাজারাম মিশ্র এই পুজোর স্থাপনা করেছিলেন। স্বপ্নে নাকি দেবীর নির্দেশ তিনি পেয়েছিলেন।
আজও আড়রার এই মিশ্র পরিবারের দুর্গাপুজো তার পাঁচ দিনের আচার-অনুষ্ঠান করে। গ্রামবাসীর মধ্যেও এই পুজো শ্রদ্ধার জায়গা। পুজোর দিনগুলিতে পরিবারের মহিলারা ঘরের বাইরে বেরনোর সুযোগ পান না, পুজোর সময় সব কাজ ঘরের ভেতরেই হয়। এই পুজো গ্রামের সম্প্রীতি ও সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষার গুরুত্বও বহন করে চলেছে।
Discussion about this post