ধর্মকারার প্রাচীরে এ যেন কার্যত বজ্রপাত। যখন সারা দেশ জুড়েই জাতের নামে, ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতি চলছে। রাম-রহিমদের ক্রমেই ভাগ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে তখন এ যেন এক নতুন সূর্য ওঠার গল্প। একটা গোটা গ্রামে নেই কোনোও মুসলিম, অথচ মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি মসজিদ। আর সেই মসজিদ না ভেঙে তাকে ৭ বছর বুক দিয়ে আগলে রেখেছেন একজন হিন্দু।
কী অবাক হচ্ছেন? হিংসা ঘৃণার এই পৃথিবীতে এই দৃশ্য অবাক হওয়ারই বটে। উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরের নানহেদা গ্রামের বাসিন্দা রণবীর কাশ্যপ। ২০১৩ সালের দাঙ্গার পরবর্তী সময়ে সেই গ্রাম সম্পূর্ণ মুসলিমহীন হয়ে পড়ে। শুধু তাদের চিহ্ন হিসেবে রয়ে যায় এই মসজিদটি। আর তারপর থেকেই এই মসজিদের গায়ে দাঙ্গার আঁচ লাগতে দেননি অনুরাগ কাশ্যপ। দাঙ্গাবাজরা মসজিদ ভাঙতে এলেও তাঁর আহ্বানে গ্রামের বাসিন্দারাই হাতে হাত ধরে বিভেদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন সম্প্রতির ব্যারিকেড।
তারপর থেকে রোজ সকালে উঠে মসজিদের ঝাড়পোছ থেকে সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালানোর কাজটি তিনি নিজেই করেন। এমনকি রমজান মাস আসার আগে মসজিদকে রঙ করে সাজিয়েও তোলেন নিজের হাতেই। রণবীর সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, এটা তার ধর্মীয় দায়িত্ব। তার ধর্মীয় বিশ্বাস আসলে সব উপাসনালয়কেই শ্রদ্ধা করতে শেখায়। আসলে রবীন্দ্র-নজরুল,কিশোর – রফি, জাহির খান- সৌরভ গাঙ্গুলি,আমির খান-রাণী মুখার্জি, পার্ক সার্কাস-গড়িয়া হাট, নদীয়া-মুর্শিদাবাদ এবং হিন্দু মুসলমান এই শব্দ গুলো পাশাপাশিই মানায়। এগুলোকে ভাগ করতে গেলেই বাধে দাঙ্গা, ঝরে রক্ত। সারা দেশ জুড়ে ধর্মীয় মৌলবাদ যখন ঢেলে দিচ্ছে ঘৃণার বিষ, ঠিক তখনই রণবীরের মতো কেউ কেউ হাজির হন সম্প্রীতির অমৃত নিয়ে।
Discussion about this post