সুবর্ণরেখা নদীর তীর বরাবর জঙ্গলময় স্থলভূমি এবং বেশ কয়েকটি গ্রাম। গ্রাম, গ্রামের মানুষ ও জঙ্গল- সবমিলিয়ে যার নাম জঙ্গলমহল। চারিদিকে অজস্র কঠিন শিলাস্তর, শাল, সেগুন, পিয়াল, কেঁদ, মহুয়া, আকাশমণির অরণ্য। আর আছেন মানুষ। আছে তাঁদের বিশ্বাস, আচার, সংস্কৃতি। বাংলার এই পশ্চিম সীমান্ত প্রাচীন সভ্যতার পটভূমি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জঙ্গলমহলের মানুষের প্রাচীন লোকায়ত সংস্কৃতির সজীব ধারাটিই যেন জঙ্গলমহলের প্রাণ। এই লোকায়ত সংস্কৃতির ধারার মুখ্য অংশ হল খাবার ও পালাপার্বণ। আর শীতের পার্বণে পিঠে থাকবে না, তাই কি হয়?
সুবর্ণরেখা নদীর তীরের গ্রামগুলিতে মানুষের প্রিয় উৎসব পৌষ মাসে শীতের উৎসব। প্রতিটি বাড়িতেই নলেন গুড়, পাটালি গুড়, পিঠের সুবাস খেলা করতে থাকে। আর একথা বলা বাহুল্য, যে কাঠখোট্টা শহরের ফ্যান্সি পৌষপার্বণের থেকে জঙ্গলমহলের পৌষপার্বণ অনেকখানি আলাদা। কঠিন শিলায় ঘেরা, অথচ নদীমাতৃক এই অঞ্চলের ওই মাটির মানুষেরাই তৈরি করেন বিভিন্নরকমের পিঠে। আরসা পিঠে, মন্ডা পিঠে, পুর পিঠে ছাড়াও একাধিক রকমের পিঠে তৈরি হয় ঘরে ঘরে। এমনই একটি পিঠে হল হাঁড়িমুয়া পিঠে বা হাঁড়িমুখ পিঠে। ঝাড়গ্রাম, রোহিনী, রগড়া জুনশোলা-সহ একাধিক গ্রামে তৈরি হয় হাঁড়িমুয়া পিঠে। এটি তৈরির কায়দা শিখে নিয়ে আপনিও বানাতে পারেন জঙ্গলমহলের এই বিশেষ পিঠে।
হাঁড়িমুয়া পিঠে দেখলে অনেকেই একে কেক ভেবে ভুল করতে পারেন। এটি বানানোর জন্য প্রথমেই বিউলির ডাল জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে তিনঘণ্টা। এরপর সেই ভেজা ডাল পেষাই করে তারসঙ্গে মেশাতে হবে আদা, নারকেল কোরা, নলেন গুড়। একটি হাঁড়িতে সামান্য জল নিয়ে উনুনে বসাতে হবে। জল গরম হলে, হাঁড়ির মুখে একটি পরিষ্কার কাপড় বেঁধে তার মধ্যে বিউলির ডালের মিশ্রণ দিয়ে তার উপরে কাজু, কিশমিশ, চেরি, এলাচ ইত্যাদি দিয়ে ঢাকনা দিতে হবে। জলের গরম ভাপেই তৈরি হবে এই পিঠে। শীতের মরশুমে আর দেরি না করে শিগগির বানিয়ে ফেলুন হাঁড়িমুয়া পিঠে। ঘরে বসেই পান জঙ্গলমহলের স্বাদ।
Discussion about this post