বাঙালির শীতকাল মানেই যেন লেপ, কম্বলের আদরের পাশাপাশি বেড়াতে যাওয়ার ছুটি। আর ঘুরতে যেতে ভালোবাসেন না, এমন মানুষকে খুব কমই হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে। আর শীতের সময়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার তো মজাই আলাদা। আর এখনও যাঁরা বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেননি, তাঁরা আর দেরি করবেন না। সময়ের অভাবে দূরে যেতে না পারলেও, চিন্তা নেই। কলকাতার আশেপাশেই অনেক বেড়ানোর জায়গা রয়েছে। শুধু খুঁজে নেওয়ার অপেক্ষা যে আপনি কোথায় যেতে চান। কাছাকাছির মধ্যে বেড়াতে যাওয়ার মনোরম গন্তব্যগুলির মধ্যে একটি হল গোলপাতা ফরেস্ট।
গোলপাতা ফরেস্ট, যা ‘মিনি সুন্দরবন’ নামেও পরিচিত। এই জায়গাটি মূল কলকাতা শহরের মানুষের কাছে কিছুটা অজানাও বলা যায়। টাকি একটি অফবিট গন্তব্য যা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত। এখানেই রয়েছে গোলপাতার জঙ্গল। নাম থেকেই বোঝা যাচ্ছে গোলপাতা ফরেস্ট গোলপাতা গাছে ভরা। শুধুমাত্র গোলপাতা গাছই নয় সুন্দরবনের বিখ্যাত সুন্দরী গাছও এখানে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে এবং হয়তো এই কারণেই গোলপাতা ফরেস্টকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি ইছামতী নদীর তীরে অবস্থিত যা ভারত ও বাংলাদেশকে পৃথক করেছে। বলা যায়, গোলপাতা ফরেস্ট হল এমন একটি বিন্দু যেখানে নদীটি এতটাই সংকীর্ণ যে এটি দুটি দেশকে কাছাকাছি নিয়ে আসে। এখানে নদীর দু’পাশে কোন বেড়া দেওয়া হয়নি এবং নদীটিকে আর্ন্তজাতিক সীমানা হিসেবে ধরা হয়েছে। দুই পারের মানুষ স্বাধীনভাবে নদী ব্যবহার করতে পারেন কিন্তু জমি পারাপার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
গোলপাতা ফরেস্টে রয়েছে শহুরে কোলাহল থেকে নিরবচ্ছিন্ন একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। ইছামতী নদীর শীতল বাতাস, আশেপাশের গোলপাতা গাছ, সুন্দর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত আপনার মনকে স্বস্তি দেবে। এখানে আপনি নৌকা ভ্রমণ, জলক্রীড়া এবং বনভোজন উপভোগ করতে পারেন। যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী আবাসস্থল, তাই এই বনটিতে বহু ধরনের পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং অন্যান্য প্রাণীও রয়েছে। গোলপাতা ফরেস্ট দেখার সেরা সময় হল নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে আবহাওয়া বেশ আরামদায়ক এবং পিকনিক করার জন্য মনোরম থাকে। বর্ষাকালে এই জঙ্গল আরও পূর্ণ ও সবুজ হয়ে ওঠে। তবে বর্ষায় এখানে না যাওয়াই ভালো।
এবার আসা যাক আপনি গোলপাতা ফরেস্টে পৌঁছবেন কীভাবে? কলকাতা থেকে গোলপাতা ফরেস্টে পৌঁছনোর সেরা উপায় হল ট্রেন। আপনি শিয়ালদহ-হাসনাবাদ লোকাল ট্রেনে চড়ে টাকি রোড স্টেশনে নামতে পারেন। এবার স্টেশন থেকে বনে যাওয়ার জন্য আপনাকে একটি ভ্যান বা টোটো বুক করতে হবে। এছাড়াও বসিরহাট হয়ে টাকি যাওয়ার জন্য কলকাতা থেকেও বাস রয়েছে। সীমান্তের বেশ কাছাকাছি হওয়ায়, আপনার একটি পরিচয়পত্র নিয়ে আসা প্রয়োজন কারণ এখানে একটি বিএসএফ চেকপোস্ট রয়েছে।
Discussion about this post