কথায় আছে যেখানে ভূতের ভয়,সেখানেই সন্ধ্যে হয়। তাই সন্ধ্যার পর এমন ভুতুড়ে জায়গা এড়িয়ে চলাই উচিৎ। তবে প্রশ্ন হল কলকাতায়, যেখানে মাঝরাতেও থাকে সন্ধ্যার আমেজ সেখানে কি ভুতুড়ে জায়গা থাকতে পারে? নিশ্চয়ই পারে। তেনাদের আনাগোনা আছে আমাদের মাঝেই। হয়তো বা আপনার ঘাড়ের কাছে ঠাণ্ডা নিশ্বাস ফেলে আপনার সাথে এই লেখাটাও পড়ছে। তাই আর দেরী না করে জেনে নেওয়া যাক তিলোত্তমার দক্ষিণে অবস্থিত ন্যাশানাল লাইব্রেরীর আনাচে কানাচে এখনও কাদের বাস!
বই প্রিয় মানুষদের কাছে ন্যাশনাল লাইব্রেরী নিঃসন্দেহে খুব প্রিয় জায়গা কিন্তু তেনাদের কাছেও ন্যাশনাল লাইব্রেরীর আকর্ষণ বিন্দুমাত্র কম নয়। কলকাতা অন্যতম ভুতুড়ে জায়গাগুলোর একটি হচ্ছে কলকাতা ন্যাশনাল লাইব্রেরি। দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরে অবস্থিত এই ভবনটিতে আগে ছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের বাস। শোনা যায়,রাতের বেলা যখন চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঠিক সেই সময়ে তার আগমন ঘটে। অনেকেই তাকে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন। আবার দিনের বেলা লাইব্রেরি খুললে বিভিন্ন চেয়ার-টেবিল এদিক-ওদিক হওয়ারও নজির রয়েছে। এখানে পড়াশোনা করতে আসা অনেকেই বলেছেন, বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে থাকার এক পর্যায়ে আচমকাই নাকি ঘাড়ে অদৃশ্য কারোর নিঃশ্বাস অনুভব করেছেন তারা। এমনকি লাইব্রেরীর কর্মীরা অনেকেই এমন দাবি করেছেন যে একটি কালো ছায়া ঘরের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে আচমকা দেওয়ালের মধ্যে মিলিয়ে যায়। আবার কখনো বা সিঁড়িতে শোনা যায় অদ্ভুত সব পায়ের আওয়াজ।
তাছাড়া ২০১০ সালে ২৫০ বছরের পুরনো এই ভবনের ভূত-রহস্য আরো ঘনীভূত হয় যখন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া একদম নিচের তলায় একটি পরিত্যক্ত ঘরের সন্ধান পায়। অনেকের মতে এটি ব্রিটিশ আমলের গোপন কোনো কুঠুরি। তবে কি এই কক্ষেই বাস করেন হেস্টিংস সাহেবের ভূত! তবে এখানেই কিন্তু শেষ নয়।শোনা যায়, একবার লন্ডনের এক স্কলার এখানে এসেছিলেন তার রিসার্চ পেপার তৈরীর কাজে। কিন্তু পরের দিন আর তার ফেরা হয়নি। এমনকি ভবনের পুর্নগঠনের কাজে এসে বেঘোরে প্রাণ হারিয়েছিলেন বারোজন শ্রমিক। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, কাউকে আক্রমণ করা হেস্টিংস সাহেবের ভূতের অভিসন্ধি নয়। বরং তিনি নাকি খুঁজে চলেছেন সেই ব্ল্যাক ব্যুরোটি, জীবিতা অবস্থায়ও যেটির নাগাল তিনি পাননি। হেস্টিংস বিশ্বাস করতেন, এই ব্ল্যাক ব্যুরোটিই পারবে তাঁকে ‘হাউজ অফ কমন্সে’ নির্দোষ প্রমাণ করতে। যদিও শেষ পর্যন্ত তার ওপর থেকে সকল অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবুও হেস্টিংসের মন থেকে আজও দূর হয়নি নথিগুলো পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন।
অবশ্য রাতের নিকষ অন্ধকারে যার আবির্ভাব ঘটে, তিনি যে হেস্টিংস সাহেব কি না তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থেকেই যায়। জানা গিয়েছে পরবর্তী গভর্নর জেনারেল চার্লস মেটকাফের স্ত্রী লেডি মেটকাফে আত্মহত্যা করেছিলেন এই বাস ভবনে। অনেকেই তাকে এখনও পুরাতন বই এবং তাকগুলি থেকে ধুলো বালি পরিষ্কার করতে দেখেছেন। তাই একবিংশ শতাব্দীতে এসেও রাতের অন্ধকারে তেনাদের অবস্থান লাইব্রেরীর প্রতি আনাচে কানাচে এতটাই সক্রিয় যে, চাইলেই কিন্তু দেখা মিলতে পারে!
Discussion about this post