জায়গা ছেড়ে দিতে কেউই খুব একটা পছন্দ করে না! তা সে মানুষ হোক বা ভূত! সেই জন্যই পরশুরাম লিখে গিয়েছিলেন, শহর কলকাতার পথে যে ভিড়টা চোখে পড়ে, তার পুরোটাই মানুষের নয়। ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে থাকে ভূতেরাও! এক ঝলক দেখে তাদের চেনার কোনও উপায় নেই! যদি তারা স্বরূপে আসে, তখনই বোঝা যায় যে তাদের বাস পরপারে! তাই আজও তিলোত্তমার বুকে রাতের অন্ধকারে ‘তেনাদের’ বেশ ভালোই আনাগোনা রয়েছে। আর এ বিষয়ে তেনাদের পছন্দের জায়গা কিন্তু আপনাদের খুব পরিচিত ‘ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম’।

ধরা যাক, আপনি পৌঁছে গিয়েছেন মিউজিয়ামের কাছে,যেতে যেতে হঠাৎ কথা কাটাকাটি আর গুলির শব্দ শুনলে কিন্তু সাবধান! শোনা যায়,প্রায় দুশো বছর আগে এই ভবনেই বাস ছিল ওয়্যারস্টিংসের স্পিক সাহেবের। এই স্পিক সাহেবের কাছেই একবার এক বিশেষ আর্জি নিয়ে এসেছিলেন এক শিখ যুবক। তার এই বিশেষ আর্জিটি স্বীকৃতি না পাওয়ায় তিনি চড়াও হন সাহেবের ওপর। ঘটনা যখন তুঙ্গে,হঠাৎই শোনা গেল রাইফেলের তীব্র শব্দ! লুটিয়ে পড়ল যুবকের রক্তাক্ত দেহ। তাই আজও মধ্য রাতে মিউজিয়ামের অন্দরে কান পাতলেই নাকি শোনা যেতে পারে রাইফেলের সেই শব্দ, দেখা মিললেও মিলতে পারে সেই যুবকের!

গা’টা একটু ছমছম করছে কি? করারই তো কথা! তবে এখানেই কিন্তু শেষ নয়,আরও আছে। একবার এই ভবনের ছাদের স্কাইলাইট পরিষ্কার করতে গিয়ে দুটি শোকেসের মাঝে চাপা পড়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় এক শ্রমিকের। স্থানীয়দের মতে, আজও গভীর রাতের অন্ধকারে কে যেন কাপড় মুড়ি দিয়ে ছাদে ঘোরাফেরা করেন! উত্তর পশ্চিম কোণের ঘরটায়,একদা যেটি ছিল সাহেবের ‘নাচঘর’। মাঝ রাতে সেই ঘর থেকে নাকি ভেসে আসে নর্তকীদের নুপূরের শব্দ, এমনটাই শোনা যায় এখানকার কর্মচারীদের কাছ থেকে!
এতটা অব্দি শুনেই যদি ভাবেন তেনাদের কাহিনী শেষ,তা কিন্তু নয়! জানেন কী,এই ভবনের ভিতরে রয়েছে আস্ত একখানা মিশরীয় মমি!চার হাজার বছরের পুরনো,বিচিত্র রঙের লিনেন জাতীয় কাপড়ে জড়ানো এই মমিটি দেখলে ছোটদের তো বটেই বড়দেরও একটু গা ছমছম করে বৈকি! রাতবিরেতে তাকে ঘুরতেও নাকি দেখেছেন কোনও কোনও সিকিওরিটি গার্ড। নিশুতি রাতে এই ভবনের অনেক পুরনো কর্মচারী শুনেছেন আলতো পায়ে সিঁড়ি দিয়ে আলগা চলনের ধ্বনি। রাত নামলেই যেন একটা শিহরণ জাগানো দমকা বাতাস নাকি পাক খেতে থাকে এই মমিকে ঘিরে। এসবটাই কি গল্প না সত্যি? এই প্রশ্মের উওর একমাত্র দিতে পারবেন রাতের অন্ধকারে আগমন ঘটানো ‘তেনারাই’! একবার মিউজিয়ামের অন্দরে ঢুঁ মেরে দেখতেই পারেন! দেখা মিললেও মিলতে পারে ‘তেনাদের’!
Discussion about this post