শিয়ালদহ স্টেশনে ঢুকেই আপনার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হবে। এত মানুষ, এত বিভিন্ন ধরণের শব্দ, এত দোকান। তারপর ধীরে ধীরে সাউথ সেকশনের ট্রেনের দিকে হাঁটা লাগানো। বলা ভালো যুদ্ধ করতে করতে এগোনো। তারপর কাঙ্খিত ট্রেনটিতে উঠে বাদুড়ঝোলা হয়ে কোনমতে টিকে থাকা। হঠাৎ দুম! বোমা ফাটার শব্দ যেন! আপনি আঁতকে উঠলেন! তারপর মুখ ফিরিয়ে দেখলেন স্টেশনে। পরম তৃপ্তিতে কাচের গ্লাসের পানীয়টি এক ঢোঁকে শেষ করছে বেশ কিছু মানুষ। আপনার স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে। আপনিও এগিয়ে যান ‘ফটাস জলে’র দিকে।
জলের সঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড দ্রবীভূত করে তৈরি হয় এই সোডা ওয়াটার। এই বিশেষ পানীয়টিই পরিচিত ‘ফটাস জল’ নামে। এই পানীয় মূলত কাঁচের বোতলে বিক্রি হয়। ওপেনার দিয়ে বিক্রেতারা বোতলের মুখটি দ্রুত খোলেন, তাতেই পটকা ফাটার মতো একটি আওয়াজ হয়। বোতলের মুখ খুলতে গিয়ে এমন বিকট আওয়াজের জন্যই সম্ভবত এই পানীয়ের নাম হয়েছে ‘ফটাস জল’।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্যতম মজার ব্যাপার হল এই ফটাস জল। এটি শুধুমাত্র দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলারই একটি বিখ্যাত পানীয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের আর কোথাও তেমনভাবে দেখতে পাওয়া যায় বলে জানা যায় না। দশ বছর আগেও কমবেশি চোখে পড়তো শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার লোকাল ট্রেনগুলিতে, বা স্টেশনে। কিন্তু, পরে সরকারিভাবে ফটাস জল বিক্রি নিষিদ্ধ করে দেওয়ার পর এই বিক্রি অনেক কমে গেছে, তবে দেখা একেবারেই মেলেনা বললে হবে ভুল। এখনও পার্ক সার্কাস, সোনারপুর, বারুইপুর স্টেশনে খুঁজলেই ইতিউতি মিলে যাবে ফটাস জলের ঠেলাগাড়ির।
উনিশ শতকের শেষের দিক থেকে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় এই জল বিক্রি হত নির্দিষ্ট আকৃতির বোতলে। পানীয়টি সহজেই পাওয়া যেত বান্টাওয়ালা নামে পরিচিত রাস্তার বিক্রেতাদের কাছে। ধীরে ধীরে এই পানীয় ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে উঠেছে। গ্রীষ্মের মাসগুলিতে এর চাহিদা বেশি থাকে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন স্বাদে বিক্রি হয়। কখনও লেবুর রস, কখনও বা বরফ কুচি, আবার কখনও চাট মশলা এবং ‘কালা নমক’ মিশিয়ে বিক্রি হয়ে থাকে। ফটাস জল দিল্লি, পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশেও বেশ জনপ্রিয়। তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশেও অন্য নামে, অন্য ভাবে বিক্রি হয়।
Discussion about this post