উচ্চশিক্ষা লাভ করার পরেও পশ্চিম বাংলার যুবক, যুবতী, তরুণ, তরুণীদের উপার্জনের উপায় খুব বেশি নয়। ‘চাকরি নেই’- এই কথা বিগত কয়েক বছরে খুব স্বাভাবিক এবং পরিচিত শব্দবন্ধ হয়ে উঠেছে। রাজ্যে শিক্ষা এবং চাকরির প্রত্যেকটি স্তরেই দুর্নীতি, জটিলতা সবমিলিয়ে মানুষকে বেছে নিতে হচ্ছে অন্য পথ, অন্য উপায়। শুধু পেটে কিছু দিয়ে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ খুঁজে চলেছেন কাজ। যেভাবে একা হাতে কাজ খুঁজে নিয়েছেন সোদপুরের কেয়া ব্রম্ভ।
সোদপুরের সুখচর পঞ্চাননতলা রোডের বাসিন্দা কেয়া। ছোটবেলা থেকে অভাবের মধ্যেই বড় হওয়া তাঁর। বাবা গাড়ি চালিয়েই কেয়া এবং কেয়ার দাদাকে পড়াশোনা করিয়েছিলেন। কিন্তু মাস্টার্স পড়ানোর ক্ষমতা তাঁর ছিলনা। কেয়া পড়াশোনা করতে চেয়েছিলেন। তিনি নিজেই ছাত্র পড়িয়ে নিজের মাস্টার্স করার খরচ তোলেন এবং রবীন্দ্রভারতী থেকে সংস্কৃতে মাস্টার্স করেছেন। কিন্তু চাকরি কোথায়? কেয়া মেডিক্যাল রিপ্রেসেন্টেটিভের কোর্স করেন, চাকরিও পান। কিন্তু সেই চাকরিও চলে যায়। এরপর তিনি র্যাপিডো চালিয়েছেন, লোকজন ছি ছি করে বলেছে, “শেষে মাস্টার্স করে বাইক চালাচ্ছিস?” শেষমেশ এই খাবারের দোকান।
এককথায় প্রায় একাই সংসার চালাচ্ছেন কেয়া। সোদপুরের সুখচর কবিরাজ বাড়ির মোড়ে তাঁর খাবারের ঠেলা গাড়ি। এই ঠেলা গাড়ি থুড়ি দোকানের নাম ‘ফুড রিচারজ’। কেয়ার বাবা ড্রাইভার। ভাড়ার গাড়ি চালিয়ে এই বয়সে আর সংসার টানতে পারেন না তিনি। আর মা অসুস্থ। ব্রেন স্ট্রোকের রুগি। তাই উপার্জনের মানুষ একা কেয়াই। সকালে হিঙের কচুরি, ঘুগনি থেকে শুরু করে রাত্রি পর্যন্ত ভাত, মাছ সমস্ত কিছুই পাওয়া যায় তাঁর দোকানে। সাহায্য করেন অসুস্থ মা। কেয়ার স্বপ্ন একদিন তাঁর নিজের রেস্তোরাঁ হবে। বাবাকে আর গাড়ি চালাতে হবে না। মাকেও আর গরমে দাঁড়িয়ে রান্না করতে হবে না।
ছবি ও তথ্যঋণঃ UltiMad Motivation
Discussion about this post