তিনি দেবাদিদেব মহাদেবের মানস কন্যা রূপে পূজিত হন। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে তাঁকে নিয়ে লেখা হয়েছে বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ মনসামঙ্গল। চাঁদ সদাগরের গল্প থেকে তাঁর ক্রোধের বর্ণনাও পাওয়া গিয়েছে। কাজেই তাঁকে তুষ্ট রাখা যে বেশ কঠিন, তাও বুঝি আমরা। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের বড়া গ্রামে গেলে দেখা যাবে কিছুটা উল্টো চিত্র। যেখানে মা মনসা পূজিত হন বেশ খানিকটা অন্যরকম ভাবে।
বড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন এলাকার একটি কৃষিপ্রধান গ্রাম। মেদিনীপুর কিংবা রাঢ় বঙ্গে মা মনসা হিসাবে পূজিত হয় সাধারণত মনসা গাছ। সেখানে মূর্তি থাকে না। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এখানে একটি মূর্তির পুজো হয়৷ মূর্তিটি নীল রঙের হলেও সেটির মুখটি সাদা। বেশ বড় দুটি চোখ এবং গোটা মূর্তিটি সিমেন্ট দিয়ে তৈরি। মূর্তির কিছু অংশে ক্ষয় হয়ে বা ঘষা লেগে বেরিয়ে এসেছে লাল একটি আস্তরণ। তবে বাড়ির লোকের থেকে জানা গিয়েছে আগে নাকি তাঁদেরও মনসা গাছের পুজো করার রীতি ছিল। পরবর্তীকালে তিনটি আলাদা আলাদা থানে আলাদা ভাবে দেবীর পুজো হয়৷ প্রথম যে থানে পুজো হয় তা ইট দিয়ে তৈরি মনসার মন্দির। এই মন্দিরের ভেতরের থানে দেবীর ছবি রেখে তাতে ফুল ধূপ দিয়ে পুজো করা হয়। যদিও এটি অস্থায়ী কারণ পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই মন্দিরের জন্য সিমেন্টের মূর্তি গড়ার বায়না দেওয়া হয়েছে।
দেবীর পুজোর দ্বিতীয় থানটি হলো তাদের বাড়ির ঠাকুরঘর যেখানে মা মনসার একটি পিতলের মূর্তির আরাধনা করা হয়, সাথেই রয়েছে একটি ঝুলন্ত ছোট্ট ঘট। মাটির দেওয়ালের খোপে এই মূর্তি রাখা, মূর্তির নীচের দিকে আরো তিনটি মনসার ছবি এবং একটি মহাদেবের ছবি। মূর্তির চারপাশে পোড়ামাটির হাতি ঘোড়া এবং একটি লোহার ত্রিশূল। ভেতর বাইরে মিলিয়ে প্রচুর এমন হাতি ঘোড়ার পুতুল বা মূর্তি দেখতে পাওয়া যায় যা বাহন হিসাবেই রাখা হয়েছে।
শহরাঞ্চলে যেখানে ধীরে ধীরে প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার বহু পরম্পরা সেখানে গ্রামে গঞ্জে আজও তা জীবিত। এখনও বাংলার গ্রামে স্থানে-অস্থানে দেখা যায় লৌকিক দেবদেবীদের মূর্তি পুজো। কথায় আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু। এই বিশ্বাস নিয়েই বাংলার গ্রামগুলি এখনও বহন করে চলেছে বাংলার প্রায় লুপ্ত হতে যাওয়া ঐতিহ্য গুলোকে।
তথ্য এবং চিত্র ঋণ – শান্তনু ঘোষ
Discussion about this post