এশিয়ার বৃহত্তম ট্রাক পার্কিং জোন দিল্লির সঞ্জয় গান্ধী ট্রান্সপোর্ট নগর। সর্বত্র ধুলোবালি ঘেরা। তার মধ্যেই এক মনে, রঙিন শাড়ি ও হাত ভর্তি রঙিন চুড়িতে সজ্জিত এক মহিলা ট্রাকের টায়ার সারিয়ে চলেছেন। এখানে তাঁকে সবাই ‘মাস্টারজি’ নামে চেনে। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে সম্মানও করে তাঁকে। তিনি হলেন শান্তি দেবী, ভারতের প্রথম মহিলা ট্রাক মেকানিক। প্রায় পঁয়ত্রিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে অত্যন্ত নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে এ কাজ করে চলেছেন তিনি।
খুবই অল্প বয়সে নিজের প্রথম স্বামীকে হারান শান্তি দেবী। এরপর দ্বিতীয় স্বামী রাম বাহাদুরের হাত ধরেই এই নগরে পা রাখেন তিনি। শুরুর দিকে তিনি একটি চায়ের দোকান খোলেন। সেইসময় তাঁর স্বামীই ট্রাক সারাতেন। কাজের চাপ বাড়তে থাকলে মূলতঃ স্বামীর সুবিধার জন্যই তাঁর ট্রাক সারাই শেখা। প্রথমে কেউ পাত্তা দেয়নি। মহিলা সারাইকারী হিসাবে বহু মানুষ হেয়ও করেছেন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি। স্বামীর উৎসাহেই এই কাজে তাঁর এগিয়ে যাওয়া শুরু তাঁর। সেসময় থেকে আজ পর্যন্ত একনিষ্ঠভাবে ট্রাক সারাই করে চলেছেন শান্তি দেবী। প্রায় পঞ্চাশ কেজি ওজনের ট্রাকের টায়ার অনায়াসে সরিয়ে নিয়ে যান তিনি। বহু পুরুষ ট্রাক সারাইকারীর থেকে নিজেকে অনেক বেশি দক্ষ বলেও তাঁকে গণ্য করা হয়।
শান্তি দেবী মনে করেন, জীবনে এগিয়ে যেতে গেলে সবথেকে বেশি যা দরকার তা হল একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। নতুন কিছু শেখার ইচ্ছা অবশ্যই থাকা উচিৎ। জীবনে চলতে গিয়ে বহু সমালোচনার শিকার হয়েছেন। কঠিন সময়ে নিজের জীবন শেষ করে দেওয়ার মত চিন্তাও মাথায় এসেছিল তাঁর। তবুও আজ তিনি সব বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে এগিয়ে চলেছেন। তাঁর জীবনের মূলমন্ত্র শুধু একটাই, ‘লড়াই’। সেই লড়াইকে নিয়েই বেঁচে আছেন তিনি, সারিয়ে চলেছেন ট্রাকের পর ট্রাকের চাকা। জীবনের শেষদিন অবধি এভাবেই কাটাতে চান তিনি। তাঁর এই লড়াই কোথাও গিয়ে যেন ধাক্কা দেয় হতাশায় ভোগা আজকের সমাজকে।আজকের যুব সমাজের কাছে শান্তি দেবী তাই এক অনুপ্রেরণার নাম।
Discussion about this post