পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা তার অতীতের ঐতিহ্যকে বহন করে নিয়ে চলেছে এক অনন্য নিদর্শনে। এই নিদর্শনটি হল কালনার অকালপৌষ গ্রামের বিখ্যাত ঘড়ি। এটি কালক্রমে ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই ঘড়িটি স্থানীয়দের কাছে ‘বড় ঘড়ি’ নামেই পরিচিত। ঘড়িটি কেবল সময় দেখানোর একটি যন্ত্র নয়, বরং এটি কালনার ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের একটি জীবন্ত প্রতীক।
জানা গেছে, ঘড়িটি প্রায় ১২০ বছর বা তারও বেশি পুরনো। লোকমুখে এটি ঘোষ বাড়ির ঘড়ি নামেই পরিচিত। এত বছর ধরে একবারও কাঁটা থামেনি ঘড়িটির। তিনটি মুখ এই ঘড়িটির বিশেষত্ব। ঘড়িটি লোহার বর্ম দিয়ে ঘেরা এবং ভিতরের সব যন্ত্রপাতি উন্নতমানের বিলিতি পিতল দিয়ে তৈরি। পনেরো দিন অন্তর দম দিতে হয় এই ঘড়িতে। ব্রিটিশ আমলের এই ঘড়িটির দাম নেহাত কম নয়! একশো পঁচিশ বছর আগে আট ফুট লম্বা ও আড়াই ফুট চওড়া এই সুবিশাল ঘড়িটির দাম পড়েছিল প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। তখনকার দিনে এই টাকা নেহাত মুখের কথা নয়।
এবার আসা যাক এই ঘড়ি তৈরির ইতিহাসের কথায়। অকালপৌষ গ্রামের বাসিন্দা অর্ধেন্দুশেখর ঘোষ এই ঘড়িটি তৈরি করান। তিনি ছিলেন খুবই শৌখিন প্রকৃতির মানুষ। বিলিতি ঘড়ির প্রতি তাঁর একটা আকর্ষণ ছিল। নিজের বাড়িতে একটি সুন্দর ঘড়ি লাগাতে চেয়েছিলেন তিনি। তাই ১৮৯৫ সালে অর্ধেন্দুশেখর বাবু ‛ওয়েস্ট অ্যান্ড ওয়াচ’ কোম্পানিকে একটি বড় মাপের ঘড়ি বানাতে দেন। ১৮৮৬ সালে সুইজারল্যান্ডের লেট্রন শহর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল কোম্পানিটি।
বর্তমানে অর্ধেন্দুশেখর বাবু আর নেই। অর্ধেন্দুশেখর বাবুর বংশধরেরা দেখাশোনা করে এই ভি আই পি ঘড়িটির। এখন এই ঘড়ির দায়িত্ব অর্ধেন্দুশেখর বাবুর নাতি তনুমন ঘোষের ওপর। তিনি এই ঘড়িকে নিজের পরিবারের সদস্যের মতোই দেখাশোনা করেন। তিনি জানান, “বাবা বেঁচে থাকাকালীন এক ব্যবসায়ী এসেছিলেন ঘড়িটি কিনতে। কোটি খানেক দাম উঠেছিল। বাবা ফিরিয়ে দিয়েছিল তাকে।” তনুমন ঘোষ চান যে, এই ঘড়িটি সরকারিভাবে সংরক্ষিত হোক। তিনি চান এই ঘড়িকে ‘হেরিটেজ’ তকমা দেওয়া হোক। কারণ তিনি এই ঘড়িকে বিক্রি করে দিতে চান না। তাঁর ইচ্ছা এই ঘড়িটি তাঁর পরিবারের ঐতিহ্য হিসাবেই থেকে যাক।
Discussion about this post