শীত প্রায় দরজায় কড়া নাড়ছে। শীতকাল মানেই রংচঙে গরম পোশাক, সুস্বাদু খাবার, পিকনিক, বেড়াতে যাওয়া আর আনন্দ করা। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, পাড়া প্রতিবেশী, অফিসে সকলকে নিয়ে পিকনিক করা বাঙালি নস্টালজিয়া। এই রেওয়াজ অনেককাল আগে থেকেই চলে আসছে। আর এই পিকনিকের মাধ্যমেই পাড়ার মাঠ, বাড়ির ছাদ, বিভিন্ন পিকনিক স্পটে সবাই একসাথে হয়ে ব্যস্ততার মাঝেও আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পাড়ার মাঠ বা বাড়ির ছাদ প্রায় একঘেয়ে জায়গা। একটু দূরে কোথাও গিয়ে পিকনিক করলে বেশ ভালোই হয়। কলকাতার খুব কাছেই রয়েছে পিকনিক করার জন্য একটি আর্দশ স্থান – ফলতা।
ফলতা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত। ব্রিটিশ আমলে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল। বলতে গেলে, এই শহরটি হল দামোদর, হুগলি ও রূপনারায়ণের মিলনস্থল। এখানকার সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরূপ দৃশ্য দেখতে অনেকেই ভিড় জমায়। আর শীতকালে এই দৃশ্যের সৌন্দর্য্যই আলাদা। শহরের ভিড়, একঘেয়ে ব্যস্ত জীবনের ফাঁকে একদিন এখানকার নিরিবিলি শান্ত সবুজ পরিবেশে এসে সময় কাটাতে পারেন। নৌকা চড়া, পরিযায়ী পাখি দেখা ও এখানকার সন্ধ্যার সূর্যাস্তের দৃশ্য আপনাকে মুগ্ধ করে দেবে। এখানেই আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর খামার বাড়ি রয়েছে, এটি বর্তমানে বোস বিজ্ঞান মন্দির নামে পরিচিত।
শুধুমাত্র মনোরম প্রকৃতিক সৌন্দর্য্যই নয়। ফলতায় রয়েছে এক বর্ণময় অতীতও। ১৭৫৬ সালে যখন সিরাজদৌল্লা কলকাতা দখল করেন, তখন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারীরা কলকাতা থেকে ফলতায় পালিয়ে আসেন। একসময় ওলন্দাজদের ব্যবসা-বাণিজ্য চলত ফলতায়। বিরাট এক কারখানাও এখানে তাঁরা তৈরি করেছিলেন। বাণিজ্যনগরী হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ ফলতা। কেন্দ্রীয় সরকার এখানে স্পেশাল ইকোনমিক জোন তৈরি করেছে। এখানে আপনারা প্রকৃতির সুন্দর অভিজ্ঞতার আভাস পাবেন। হুগলি নদীর তীর ধরে আপনি হেঁটে চলবেন আর আপনার মাথার উপর দিয়ে পরিযায়ী পাখিরা উড়ে যাবে। নদীর ধারের মৃদু ফুরফুরে হাওয়া কখন যে আপনাকে প্রকৃতির সৌন্দর্য্যৈর মায়াজালে বেঁধে ফেলবে তা আপনি নিজেও বুঝতে পারবেন না। আপনি চাইলে পরিবার বা বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পিকনিক করে সেদিনই বাড়ি ফিরে আসতে পারবেন।
ফলতার আশেপাশেও রয়েছে বেশ কয়েকটি বেড়ানোর জায়গা। ডায়মন্ডহারবার এখান থেকে মাত্র আধঘণ্টা দূরে এবং আপনি এখান থেকে রায়চক কয়েক মিনিটেই পৌঁছে যেতে পারেন। পিকনিকের পাশাপাশি এখানকার রায়চক দূর্গসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ঘুরে নিতে পারেন। আবার আপনি চাইলে ফলতা থেকে মাত্র ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যেই নুরপুরের নদীতীরবর্তী শহরে যেতে পারেন। রূপনারায়ণ নদীর তীরে অবস্থিত পূর্ব মেদিনীপুরের ঐতিহাসিক শহর তমলুকও এখান থেকে বেশি দূরে নয়। কলকাতা থেকে ফলতার দূরত্ব মাত্র ৫০ কিমি। ডায়মন্ডহারবার থেকে যেতে সময় লাগে মাত্র ২ ঘন্টা।
Discussion about this post