রাঢ় বাংলার অন্যতম আদি ধানের নাম কলমকাঠি। বর্তমানে এই ধানের প্রজাতি বিলুপ্তপ্রায়। এক সময় বহুলভাবে এই চাল চাষ হত বাংলায় এবং বাংলার বিভিন্ন জেলায়। মূলত বাঁকুড়া, পুরুলিয়ার মত লাল মাটিতেই এই চালের চাষ হত বেশি। আজ বড় বড় কোম্পানির ঝকঝকে চালের বাজারে, দাম নেই ঢেঁকিছাটা এই পুষ্টিকর চালের। তবু এখনও কিছু মানুষ নিজেদের উদ্যোগে বাঁকুড়াতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে করে চলেছেন এই ধানের চাষ। আর হাতে গোনা কিছু মানুষ বাজারের রাসায়নিক সারবিহীন, কীটনাশক বিহীন এই চাল সরাসরি কিনে নিচ্ছেন চাষীদের কাছ থেকে।
রাসায়নিক নির্ভর উচ্চফলনশীল ফসলের চাপে বাংলার মাটি থেকে হারিয়ে গেছে মানুষের শ্রমে তৈরি অরগানিক ফসল। তেমনই একটি উল্লেখযোগ্য নাম হল কলমকাঠি। চাষের কাজে যন্ত্র বা অন্যান্য আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহারের আগে, যাঁরা বংশপরম্পরায় চাষ করতেন নিজেদের স্বাভাবিক জ্ঞান থেকেই, তাঁদেরই হাতে তৈরি হত উন্নত মানের কলমকাঠি চাল। এই মানুষগুলিকে নিয়ে বাঁকুড়ার বাসিন্দা বিপ্লব দাস সম্প্রতি বানিয়ে ফেলেছেন আস্ত একটা সিনেমা। সিনেমার নাম ‘কলমকাঠি’। ছবিটি পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশসহ, ভারতেও বেশ কিছু চলচ্চিত্র প্রদর্শনী প্রতিযোগিতায় পুরষ্কৃত হয়েছে। আন্তর্জাতিক কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবেও তার প্রদর্শনী হয়েছে।
কৃষি কাজকে ফিল্মের দৃশ্যের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন বাঁকুড়ার পরিচালক বিপ্লব। কলাকুশলী ও সহযোগীরাও মূলত বাঁকুড়ার বাসিন্দা। বাঁকড়ি ভাষাতেই শুটিং হয়েছে ছবির। ছবির গল্প ক্ষেত খামারের, গল্পের মধ্যে রয়েছে মেঠো গন্ধ। রয়েছে ‘কলমকাঠি’র মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ধানকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য মানুষের সঙ্গে পুঁজিবাদী দুনিয়ার সামাজিক লড়াই। পুঁজিবাদ, ভোগবাদের জন্য পৃথিবীর নিজস্ব সম্পদের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, এবং সেই ব্যবহারের ফলে তৈরি হওয়া ‘ক্লাইমেট ক্রাইসিস’কেই তুলে আনে ‘কলমকাঠি’র মত উন্নতমানের চালের বিলুপ্তিকরণ। আর এই বিষয়টিই চোখে আঙুল দিয়ে স্পষ্ট করে দেয় ‘কলমকাঠি’ ছবিটি।
Discussion about this post