২২ সেপ্টেম্বর পেরিয়ে গেল মহীনের একজন ঘোড়ার জন্মদিন। বেশ আনন্দের সঙ্গেই পালিত হল সেই দিনটি। তবে আনন্দের সঙ্গে সামান্য দুঃখও যে মিশে ছিল না, তা নয়। কারণ মহীনের সেই ঘোড়াটির নাম তাপস বাপি দাস। ২০২৩ সালের ২৫ জুন তিনি দীর্ঘদিনের অসুখের পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। আবেগ তাড়িত হয়েছে তাঁর ভক্তেরা, ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র ভক্তেরা, কষ্ট পেয়েছেন সেইসব মানুষেরা, যাঁরা সামান্য হলেও চিনেছেন, বুঝেছেন মহীনের গান কে। তাপস বাপি দাস সেই ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’র একজন প্রতিষ্ঠাতা, গীতিকার, সুরকার এবং গায়ক। দলের সতীর্থদের একে একে চলে যাওয়া ও দল ভাঙার পরে তাপস বাপি নিজেই তৈরি করেছিলেন তাঁর দল ‘মহীন এখন ও বন্ধুরা’। তাঁর জন্মদিনে উদ্বোধন হল সেই দলেরই অ্যালবামের।
অ্যালবামের নাম ‘নালহীন ঘোড়ার পান্ডুলিপি’। নালহীন ঘোড়া কেমন হয়? নালহীন ঘোড়া লাগামছাড়া। সে মানেনা কোন নিয়ম। সে আপন খেয়ালে ছুটে চলে। ‘মহীন এখন ও বন্ধুরা’র এই অ্যালবামও কিন্তু সেই লাগামছাড়া ঘোড়াটির মতই। অ্যালবামের পাঁচটি গানই একেকটির থেকে আলাদা। যাদের বাঁধা যায়না কোনো নির্দিষ্ট ‘থিমে’। সবকটি গানই লেখা এবং সুর করেছেন তাপস বাপি দাস। অ্যালবামের শেষ গানটি তাঁর গেয়ে রেকর্ড করা শেষ গান। চল্লিশ বছর পর তাপস বাপি এবং তপেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একসঙ্গে গাওয়া একটি গানও রয়েছে অ্যালবামে।
২২ সেপ্টেম্বর তাপস বাপির জন্মদিন উপলক্ষ্য করেই অনুষ্ঠিত হয়েছে অ্যালবাম প্রকাশের অনুষ্ঠানটি। এদিন মানি স্কোয়ার মলের প্রাঙ্গনে উপস্থিত ছিলেন রূপম ইসলাম, রঞ্জনপ্রসাদ, ‘ভূমি’র সৌমিত্র রায়, উপল সেনগুপ্ত, ‘সহজিয়া’র দেব চৌধুরী, ‘নগর ফিলোমেলে’র প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়, তন্ময় কর, ‘ফকিরা’র তিমির বিশ্বাস, ‘লক্ষ্মীছাড়া’র গৌরব ‘গাবু’ চ্যাটার্জি এবং আরো অনেকে। ছিলেন শিল্পী হিরণ মিত্র। ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ বেশ কিছু অ্যালবাম আর্ট তো বটেই, ‘মহীন এখন ও বন্ধুরা’র সমস্ত আর্ট ওয়ার্ক করে থাকেন হিরণ মিত্র। এই অ্যালবাম এবং ‘মহীন এখন ও বন্ধুরা’ নিয়ে আশাবাদী সকলেই। অনুষ্ঠানে ‘মহীন এখন ও বন্ধুরা’র গান শুনে রূপম ইসলাম সহ অন্যান্য শিল্পীদের কন্ঠেও শোনা গেছে প্রশংসার সুর।
তাপস বাপি দাসের জীবনসঙ্গিনী সুতপা ঘোষ জানালেন, “মানুষ ঠিক কী বলছে জানিনা, তবে বাপি আমাদের যেভাবে পথ দেখিয়েছে, আমরা সেভাবেই দেখছি। সেই দেখা মহীনের দেখা থেকে আলাদা যেমন নয়, তেমনই সেই দেখার সঙ্গে আরও কিছু যুক্তও হয়েছে, যুক্ত হয়েছে সময়।’’ অর্থাৎ সময়ের ছাপকে স্বীকার করেই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে চলবে ‘মহীন এখন ও বন্ধুরা’। তাপস বাপি দাস গান গাইতে গাইতে বলতেন, “আমি মহীন, তোরা বা তোমরাও মহীন”- সেই সমস্ত মহীন আর আস্তাবলের ঘোড়াদের নিয়ে কতদূর পথ চলা যায়, তাইই যেন দেখিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায় ‘নালহীন ঘোড়ার পান্ডুলিপি’।
চিত্রঋণ : সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী
Discussion about this post