আজকাল সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনা ফেলছে আলোড়ন৷ এই বিষয়টি এতটাই জনপ্রিয় যে এটি নিয়ে অনেক সিনেমাও হয়েছে এবং মানুষজন সেগুলো দেখেছেনও খুব উৎসাহ নিয়ে। প্রতিটা সিরিয়াল কিলিং এর পিছনে থাকে একটা করে মোটিফ যেটা কার্যকর করতে খুনি পর পর প্রায় একই ভাবে খুন করতে থাকে। এই সিরিয়াল কিলিং চলে আসছে প্রাচীন কাল থেকেই। কখনও প্রকাশ্যে কখনও বা আড়ালে। ইতিহাসের পাতায় এমন এক মহিলার নাম রয়েছে যার সঙ্গে জড়িয়ে এক রক্তাক্ত পৈশাচিক অধ্যায়। তিনি হলেন কাউন্টেস এলিজাবেথ ব্যাথোরি ডি এক্সেড ওরফে এলিজাবেথ ব্যাথোরি। তিনি মধ্যযুগে হাঙ্গেরির একটি অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
১৫৯০ থেকে ১৬১০ এই সময়কালের মধ্যে ৬১০ জন মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করে ব্যাথোরি। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তাকে সর্বাধিক নারী খুনি হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। তার খুন করার পদ্ধতিও ছিল অত্যন্ত ঘৃণ্য। শিকারকে অমানবিক অত্যাচার করে খুন করত সে। তার খুনের তালিকায় থাকত গরিব, কুমারী, যুবতী মেয়েরা। তার প্রথম খুন করা মেয়েটার বয়স ছিল ১০ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে।
১০ বছর বয়সে ব্যাথোরির সঙ্গে বাগদান হয় নাদাসি পরিবারের সদস্য কাউন্ট ফেরেঙ্ক নেদাসদির। ১৫৭৫ সালে বিয়ে হয় দুজনের তখন ব্যাথোরির বয়স ছিল ১৫ আর নেদাসির ১৯। ব্যাথোরিকে নেদাসি বিয়ের উপহার হিসাবে দিয়েছিল পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ক্যাসেল অফ কাস্তে দুর্গটি। এর অওতায় ছিল ১৭ টি গ্রাম যা পরবর্তীকালে ব্যাথোরির হাতে আসে। ১৫৭৮ সালে নেদাসদি হাঙ্গেরির সেনা প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন। তিনি যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় ব্যাবসায়ীক বিষয় ও সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব পড়ে ব্যথোরির উপর। ১৬০৪ সালে দীর্ঘদিনের অসুস্থতায় নেদাসদি মারা যান। এরপর শুধু ব্যাবসায়ীক বা সম্পত্তি নয় হাঙ্গেরিয়ান ও স্লোভাক মানুষদের দায়বদ্ধতা ও চিকিৎসার দায়িত্বও এসে পড়ে ব্যাথোরির উপর। আর এর পরেই চলতে থাকে তার পাশবিক ক্রিয়াকলাপ।
তার খুনের ধরন কোন থ্রিলার সিনেমাকেও হার মানায়। কঠোর মারধোর, আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া, মুখ, হাত, পা থেকে মাংস খুবলে নেওয়া, হিমশীতল বা অনাহারে মৃত্যু। জীবিত মেয়েদের শরীরে ক্ষত করে সেলাই করত সে, তাদের গরম চাবুক দিয়ে নির্যাতন করে পুড়িয়ে বরফ জলে ফেলে দিত বা বিবস্ত্র করে গায়ে মধু ঢেলে পিঁপড়ে ছেড়ে দিত ব্যাথোরি। অনেকে তাকে নরখাদকও বলেও সন্দেহ করতেন।
ব্যাথোরির ক্রিয়াকলাপ সামনে আসার পর লুথেরান মন্ত্রি ইস্তাভান ম্যাগ্যারি তার বিরুদ্ধে ভিয়েনার আদালতে অভি্যোগ করেন। শেষ পর্যন্ত ১৬১০ সালে তদন্ত শুরু হয়। ওই বছর অক্টোবরের মধ্যে ৫২ জন সাক্ষীর বয়ান নেওয়া হয় যা ১৬১১ তে যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০০ জন। ১৬১০ সালের ৩০ শে ডিসেম্বর ব্যাথোরি ও তার চার সহযোগীকে দুর্গ থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে আরও তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রভাবশালী পরিবার ও ট্রান্সেলভেনিয়ার শাসক হওয়ার দরুন ব্যাথোরির মৃত্যুদন্ড মুকুব করা হয় এবং বদলে হয় তার আজীবন কারাবাস। সারাজীবন কারাবন্দি থাকার পর ৪৪ বছর বয়সে সে মারা যায়।
১৬১৪ সালের ২৫ নভেম্বর তাকে সিজেতে গির্জায় সমাধিস্থ করা হয়। তবে সেখানে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের ফলে তাকে এক্সেডে তার জন্মস্থানে স্থানান্তরিত করা হয়। এত কিছুর পরেও ব্যাথোরির খুনের মোটিভ আজও সবার অজানা। তখনকার প্রশাসন জানলেও সেটি প্রকাশ্যে আনা হয়নি। এরকম কত ব্যাথোরি অজান্তেই আমাদের আশেপাশে আছে। তাই ‘সাবধান রহো, সতর্ক রহো’।
Discussion about this post