“ও দাদা, আর কতক্ষণ? পা ব্যথা হয়ে গেলো যে।” “কাকু একটু জলদি দাও, মা বকবে এবার।” বর্ধমানের বিসি রোডের বড়বাজারে এটা প্রতিদিনের দৃশ্য। গত ৪৮ বছর ধরে বর্ধমানবাসী এখানকার তেলেভাজার ভক্ত। চপ’কে শিল্প হিসেবে গড়ে তোলার ধারণা বোধহয় অনেক আগেই এসেছিলো এই চপ শিল্পীর। সন্ধ্যের আড্ডায় চা’য়ের সাথে একটু চপমুড়ি ছাড়া বাঙালির ঠিক পোষায় না। সেই আড্ডায় এক পুরোনো স্বাদের মাত্রা যোগ করে বর্ধমানের দুলালের চপ।
সকাল দুপুর সময় মেপে প্রায় বৃদ্ধ দুলালবাবু। মাটির উনুনের গরম তেলে ছাড়তে থাকেন চপ, পেঁয়াজি, বেগুনি। কড়াই থেকে নামলেই নিমেষে শেষ। সকালে হয় চপ, বেগুনি, পেঁয়াজি আর ডালপুরি। পুরির সঙ্গে থাকছে তরকারি। তবে বিকেলে আর ডালপুরি হয় না। এই ছোট্ট দোকানে কর্মচারী দু’তিন জন। দুলাল নাগের হাতের আলুর চপ বর্ধমানে খুবই জনপ্রিয়। যা পরিচিতি পেয়েছে আশেপাশের অন্য এলাকাগুলোতেও। ছোট্ট দোকানটিতেই আলুর চপের পুর কীভাবে মাখলে স্বাদ বাড়বে তা প্রথম ভেবেছিলেন তিনি।
এই দোকানের শুরুর গল্পটা বেশ অন্যরকম। দুলাল নাগের পূর্বপুরুষেরা এই জায়গায় করতেন মিষ্টির ব্যবসা। পরবর্তীকালে দুলাল নাগ সেই মিষ্টির দোকান তুলে দিয়ে শুরু করেন ডালপুরি আর তেলেভাজার দোকান। আর রাতারাতি তা মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে ফেলে। বর্তমানে এই দোকানের জলখাবার শহরের ‘মাস্ট ট্রায়েড আইটেম’গুলোর একটি। সেদিনের রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে যাওয়া দোকানটি আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।
এক কড়াই ভরা তেল নিয়ে কেটে গেলো এতগুলো বছর। বর্তমানে দোকানের মূল দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দুলাল বাবুর ছেলে দিলীপ নাগ। তবে হাতা খুন্তির ভার পুরোপুরি ছাড়েননি দুলালবাবু। রোজ নিয়ম করে বসেন তার জাদু চপ বানাতে। যে জাদু মানুষের মুখে মুহূর্তে হাসি ফুটিয়ে তোলে।
তথ্য ঋণ – বঙ্গদর্শন
চিত্র ঋণ – My Food Blog
Discussion about this post