পেট থেরাপি বা পশু সহায়ক থেরাপির কথা কম বেশি একটু আধটু আমরা সবাই জানি। তবে সেভাবেও বহুল প্রচারিত না হওয়ায় এর সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য হয়তো জানা নেই। সাধারণত কুকুর, পাখি, শূকরের মতো পশুদের সাহায্যে এই থেরাপি করা হয়ে থাকে। তবে এই তালিকায় আরো একটি পশু আছে যার কথা না বললেই নয়, সে হল ঘোড়া। পশু সহায়ক থেরাপি বা পেট থেরাপির সাহায্য অসংখ্য অসুস্থ মানুষদের সুস্থ করায় অসামান্য সাফল্য এসেছে। তবে শুধু আজকের বর্তমান সময়েই নয় বরং বহু সময় আগে থেকেই এই চিকিৎসা চলে আসছে। জানা যায় প্রায় ১৭ শতকের সময়কাল থেকেই গ্রীসের চিকিৎসকেরা রোগীদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য এই থেরাপি শুরু করেছিলেন।
চলুন আজ ‘ডাক্তার পেয়োর কথা জানি। যে কিনা আসলে বছর পনেরোর একটি ঘোড়া। তবে খুব সাধারণ হর্স শোয়ের একটি ঘোড়া থেকে তার ডাক্তার পেয়ো হয়ে ওঠার যাত্রা আমাদের মন ছুঁতে বাধ্য। পেয়োর শো ম্যান হ্যাসেন বেচাকোরের থেকে জানা যায় পেয়োর আচরণ বরাবরই বাকি পাঁচটা ঘোড়ার থেকে আলাদাই ছিল। পেয়োর প্রথম হর্স শো করার দিন থেকেই পার্থক্যটা চোখে পড়েছিল। হ্যাসেনের কথায় প্রথম দিন শো শেষ হওয়ার পরেই পেয়ো মানুষদের ভিড়ে চলে যায়, এবং সেখানে নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে সঙ্গ দিতে থাকে। এরপর এই ঘটনা বারবার ঘটতেই থাকে প্রতিটি শোয়ের শেষে। একটা সময় জানা যায় পেয়ো যেই নির্দিষ্ট মানুষগুলোকে সঙ্গ দিচ্ছিল তারা সকলেই কেউ শারীরিক বা কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ। প্রথমে ভীষণ অবাক লাগলেও পরে ‘হুভস্ অফ দ্য হার্ট’ এর গবেষকরা এই বিষয়ে গবেষণা চালালে জানা যায় সত্যিই পেয়ো সাধারণ ঘোড়া নয়। দীর্ঘ চার বছরের গবেষণায় দেখা যায় পেয়োর মস্তিষ্ক বেশিরভাগ ঘোড়ার থেকে ভিন্ন ভাবে যুক্ত। সেক্ষেত্রে সে শুধু কারোর অসুস্থতাই শনাক্ত করতে পারে না, প্রয়োজনে রোগীকে সহানুভূতিও দিতে পারে।
এরপরেই শুরু হয় পেয়োর ডাক্তার পেয়ো হয়ে ওঠার যাত্রাপথ। পেয়ো তার মালিক হ্যাসেনের সাথে থাকে ফ্রান্সে। সেখানেই হাসপাতালগুলোতে সে তার পরিষেবা দেয়। অসুস্থ মানুষ বৃদ্ধ শিশু নির্বিশেষে সকলের খুব কাছের সে। তার ডিউটি হল হাসপাতালে এসে ইচ্ছেমত মানুষ নির্বাচন করে তদের সাথে সময় কাটানো। বলা বাহুল্য এর ফলও পাওয়া যায় হাতেনাতে। বিশেষত ক্যান্সারের আক্রান্ত বা মৃত্যু পথযাত্রী মানুষগুলোর মনোবল বাড়ানো বা তাদের মানসিকভাবে শান্ত রাখতে পেয়োর অবদান ভীষনভাবে লক্ষ্য করেছে ডাক্তারেরা। হাসপাতালের কর্মি ও ডাক্তারেরাই পেয়োকে ‘ডাক্তার পেয়ো’ নাম দিয়েছেন। তবে হাসপাতালের পবিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হ্যাসাককেও কম খাটতে হয় না। পেয়োকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগে ভালো করে স্নান করানো হয় বিশেষত খূরগুলিকে পরিস্কার করে তবেই হাসপাতালে ঢোকানো হয়। পেয়োর উপস্থিতিতে অসংখ্য অসুস্থ মানুষ সুস্থ হয়েছে। তাই আশা করা যায় আগামী দিনগুলোতেও পশু সহায়ক চিকিৎসা বেশ ফলদায়ক হবে।
Discussion about this post