ঠাকুমাদের ঝুলি থেকে বেরিয়ে আসা কত গল্পই আমরা ছোটতে শুনেছি। গল্প কথা রূপকথার মাঝেও যে সত্যি ঘটনাও ছিল তখন বুঝিনি। দস্যুদের গল্প কতই শুনেছি। কত সিনেমাতেই না দেখিয়েছে জলদস্যুদের নির্মমতা আর সাহসিকতা। কিন্তু আজ গল্প কথা নয়। আজ জানবো এক ভয়ঙ্কর দস্যু ক্যাপ্টেন মর্গ্যানের কথা। জলদস্যু থেকে সুরার বোতলের নিজের ছবির জায়গা করে নেওয়ার কথা।
ক্যাপ্টেন মর্গ্যান রামের কথা অনেকেই জানি। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন সেই রামের বোতলের জনপ্রিয় মুখটি কার? ছবিটি অবশ্যই ক্যাপ্টেন মর্গ্যানের। তার পুরো নাম ক্যাপ্টেন হেনরি মর্গ্যান। তিনি ছিলেন বিশ্বের অন্যতম কুখ্যাত জলদস্যু। তার জন্মসাল নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও মনে করা হয় ওয়েলসে তিনি ১৬৩৫ সালে জন্মান। তার প্রথম জীবন নিয়ে অনেক ধোঁয়াশা আছে এখনও। কিন্তু ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে জানা গেছে তিনি ওয়েলস সরকারের হয়ে স্প্যানিশ জাহাজ লুঠ করতেন। প্রচুর জাহাজ লুঠ করেছেন তিনি। তার বর্বর্তার সীমা ছিল ভয়ঙ্কর। যে জায়গায় লুঠ চালাতেন সেই জায়গার কোনও দেওয়ালকেও দাঁড়িয়ে থাকতে দিতেন না। তবে তিনি যা করতেন তা ছিল আইনত, কারণ তিনি ব্রিটিশ সরকারের লাইনসেন্স প্রাপ্ত প্রাইভেটিয়ার ছিলেন।
তিনি ছিলেন অতন্ত ক্ষমতাশীল একজন ব্যক্তি সেটা তার জীবনের বর্ণনা শুনলি বোঝা যাবে। জীবনে একাধিক জায়গা লুঠ এবং ধ্বংস করলেও তিনটি বিশেষ জায়গা তার জীবনীর বড়ো অংশ হয়ে থাকবে। তার মধ্যে একটি হলো ১৬৬৮ সালে পানামায় পোর্টবেল নামের একটি স্প্যানিশ শহর আক্রমণ। শহরে ছিল প্রচুর পরিমাণে সোনার খাজানা। রাতের অন্ধকারে অতি ধূর্ততার সাথে তিনি এবং তার সঙ্গীরা লুঠতরাজ চালায় এই পোর্টে। পোর্টবেলের সৈনিকরা এগিয়ে এলে তিনি নানেদের তার বন্দী বানিয়ে সামনে এগিয়ে দেন। তিনি জানতেন অতন্ত ধার্মিক স্পেনীয় সৈনিকরা নান বা সন্ন্যাসিনীদের সামনে নত হয়ে যাবেন। আর হলও তাই! ব্যাস আর কী, পুরো পোর্ট হল তার কব্জায়। ১৬৬৪-৭৪ এর মধ্যে তিনি প্রচুর ধ্বংসলীলা চালিয়ে যান। পরবর্তীকালে তিনি লেফটেন্যান্ট হয়ে জামাইকাতে ছিলেন।
আমরা এমন অনেক কিছুই দেখি যার গভীর ইতিহাস আছে। অনেকেই হয় তো সেই ইতিহাস নিয়ে অবগত আবার অনেকেই নন। এই ছিল ক্যাপ্টেন মর্গ্যান কোম্পানির বোতলে থাকা মানুষটির ছবির এবং নামের রহস্য। পরবর্তীকালে ডিয়েগো নামের এক ব্রিটিশ ব্যক্তি তার সুরা কোম্পানির নাম রাখেন ‘ক্যাপ্টেন মর্গ্যান’। তার বর্বরতার কথা কেউ জানুক না জানুক, বিশ্ব জুড়ে তার ছবি কিন্তু এখনও ছড়িয়ে কোনও না কোনও কাচের বোতলে।
Discussion about this post