দীপাবলি মানেই বাজি পোড়ানোর মধ্যে দিয়ে অশুভ’র বিনাশ। যদিও সেই বিনাশ লীলার মহৎ কাজে পরিবেশের আখেরে কত ক্ষতি হচ্ছে তা সংবাদ মাধ্যমের তথ্যে চোখ রাখলেই বোঝা যায়। প্রসঙ্গত, জানতে কারোরই বাকি নেই বিধিসম্মত দূষণের মাত্রা টপকে কলকাতা ও শহরতলি এখন পরিবেশবিদদের মাথা ব্যথার কারণ। তবে সচেতন নাগরিকদের রুচি ও ঝোঁক ধীরে সুস্থে হলেও পাল্টাচ্ছে। পাল্টাচ্ছে বলেই ‘কলকাতার ফুসফুস’ ময়দানের বুকে সবুজ বাজির সমারোহ।
শহীদ মিনার গ্রাউন্ডে বিরাট জায়গা জুড়ে শুরু হয়েছে ‘সারা বাংলা আতশবাজি উন্নয়ন সমিতি’ উদ্যোগে ‘বাজি বাজার ২০২৩’। বিশ্বস্ত বাজি প্রতিষ্ঠানের স্টলগুলোয় চলছে ভালোই বিকিকিনি। রয়েছে ৩০ টিরও বেশি অস্থায়ী দোকানপাট। প্রায় প্রত্যেকটা বিপণীই উৎকৃষ্ট গুণমানের পরিবেশ বান্ধব বাজি নিয়ে ক্রেতাদের মন জয় করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবে ‘ইকো ফ্রেন্ডলি’ বাজিতে পকেটে টান লাগলেও লাগতে পারে। সাধারণ বাজির তুলনায় সবুজ বাজির মূল্য একটু চড়া হওয়ার ব্যাখ্যা দিলেন কে সি পাল এন্ড সন্স’-এর কর্ণধার রঞ্জিত পাল। রঞ্জিত বাবু বলেন সবুজ বাজির পরিবেশ বান্ধব মাল মশলার দাম, প্রযুক্তিগত খরচ ও জিএসটি মিলিয়ে উৎপাদন মূল্য তুলনামূলক বেশি। তবুও অল্প লাভ রেখেই তাঁরা সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে আকর্ষণীয় বাজির পসরা নিয়ে হাজির হয়েছেন।
সাধারণ বাজি যেমন – ফুলঝুরি, রঙ মশাল, তুবড়ি, চরকি, দড়ি, রকেট যেমন একদিকে রয়েছে। তেমনই অন্যদিকে ক্রেতাদের মন জয় করবেই ক্র্যাকলিং কিং, টুয়েলভ মাঙ্কি, জোকার ও স্যাটেলাইটের মতো অভুতপূর্ব বাজি। প্রতি বাক্স হিসেবে ফুলঝুরি (১৫ সেমি) ৬৫ – ৮৪ টাকা, রকেট ১৭৯ – ৭৩০ টাকা, চরকি ২০৫ – ৩৩৬ টাকা, তুবড়ি ২৫০ – ৬৫০ টাকা। রয়েছে চকোলেট বোমের ব্যবস্থাও। আবদার করলেই হাজির হবে এবার পুজোয় দূষণ বোর্ড থেকে নির্দেশিকা মতো ১২৫ ডেসিবেলের মধ্যে রাখা শব্দবাজি। রাতের আকাশে ১০০টা শটে ১১৫ খানা রঙের খেলা দেখাতে সক্ষম ‘জোকারের’ দাম পড়বে ২৫০০ টাকা। মহাকাশে ভারতের দাদাগিরিকে ফুটিয়ে তুলতে অভিনব এই বাজিটি উপগ্রহের মতো গগনে চার চক্কর লাগিয়ে সবাইকে বিস্মিত করবেই ‘স্যাটেলাইট’। পকেটের চিন্তায় সাধারণ মানুষের কপালে যাতে ভাঁজ না পড়ে তার জন্য অবশ্যই আছে কেনা কাটার ওপর আকর্ষণীয় ছাড় এবং প্যাকেজ সিস্টেমের ব্যবস্থা।
তবে উৎসবের উজ্জ্বল প্রেক্ষাপটে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ জমেছে ইতিমধ্যেই। দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের ১২৫ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দবাজিতে ছাড় নিয়ে প্রমাদ গুনছেন পরিবেশ সচেতন মানুষ। খোলা বাজারে রাখ ঢাক না রেখেই শব্দবাজির দেদার ব্যবসা যে প্রকৃতির অসামান্য ক্ষতি করবে তা নিয়ে পরিবেশবিদরা সহমত। বাজি ও ডিজে বিরোধী মঞ্চের তরফে গৌতম সরকার বলেন , তারা দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড সহ একাধিক দপ্তরে ডেপুটেশন দিয়েছেন। গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে গৌতম বাবু বিপন্ন মানুষজন, প্রাণী ও গাছপালার প্রতি মানুষের সচেতনতা ও সহযোগিতা কামনা করেছেন। প্রসঙ্গত গত রবিবারে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে আয়োজিত বিশ্বকাপ ক্রিকেট ম্যাচের শেষে ইডেন গার্ডেনে অনিয়ন্ত্রিত আতশবাজির প্রদর্শনী প্রাণ নিয়েছে কর্তব্যরত মাউন্টেড পুলিশের ঘোড়া ‘ভয়েস অফ রিজনের।’ নিন্দনীয় এই ঘটনার সম্মুখীন শহর কতটা সংবেদনশীল হবে সেটাই দেখার। পশু-পাখি ও সবুজের নীরব যন্ত্রণা উৎসবের রোশনাই আর বিকট শব্দকে ভেদ করে আমাদের বিবেক অবধি পৌঁছয় কী না তা আগামী দিনগুলোই বলবে।
Discussion about this post