কথায় বলে ‘হুজুগে বাঙালি’। প্রায় একপ্রকার হুজুগেই আজ বাঙালি আপন ‘ভূত-চতুর্দশী’ ছেড়ে হ্যালউইন পালন করে। এই যেমন সরস্বতী পুজো কবে যে বাঙালির ‘ভ্যালেন্টাইন’স ডে’তে পরিণত হয়ে গেল বলা মুশকিল। সবই বুঝি কালের নিয়ম! তবে কি এ জাতি ভুলতে বসেছে নিজেদের আপন রীতি-নীতি?
এখন কালী পুজো আসতেই কাগজে-বিজ্ঞাপনে ‘ধনতেরাস ধামাকা’র রমরমা বাজার। দীপাবলির আগে যেমন শ্যামা পোকার বিচরণ সর্বত্র, ঠিক তেমনই ধনতেরাসে কাগজে, টিভিতে সোনার দোকানের বিজ্ঞাপনের আধিপত্য বেশি। মনের ভক্তি চাপা পড়ে যায় সোনার দোকানে ধনতেরাসের বিশেষ ছাড়ে! বর্তমানে তাই কালী পুজোর জন্য নয় বাঙালির এই দীপাবলির অপেক্ষা যেন ধনতেরাসের জন্যই।
ভূত-চতুর্দশীর দিন নাকি আমাদের পূর্ব পুরুষ নেমে আসেন মর্ত্যে, তাদের বংশধরদের দেখবার জন্য। আর সেই সঙ্গে বাঙালির এদিন চৌদ্দো শাক খেয়ে চৌদ্দো বাতির প্রজ্জ্বলন। সেই বাতির আলোই নাকি পথ দেখায় পূর্বপুরুষদের। আবার রাজা বলি এদিন নাকি পাতাল থেকে উঠে আসেন তাঁর অনুচর প্রেতাত্মাদের নিয়ে। তারা যাতে গৃহে প্রবেশ না করে তাই এতো আলো দিয়ে ঘর সাজানো। আবার অনেকাংশের মতে এদিন রাতে নাকি স্বয়ং মা কালী তাঁর ১৪ জন অনুচর নিয়ে বের হন!
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই গেল। কালীপুজো-ভূত চতুর্দশী-চৌদ্দো শাক এসব কি ধীরে ধীরে যুক্ত হবে পুরনোর খাতায়? হেমন্তের এই ঋতু পরিবর্তনের সময় চৌদ্দো শাক খাওয়াও যথেষ্ট উপকারী। এ ব্যাপারে সকলেই নিশ্চিত যে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এদের ভূমিকা বেশ জোরালো। পঁচিশ বছর আগেও ধনতেরাসের গুরুত্ব ছিল না বাংলার জনজীবনে। কিন্তু আজ তাতেই ছাপিয়ে যাচ্ছে বাজার। তবে কি ঐতিহ্যের ভূত চতুর্দশীকে সত্যিই ভুলতে বসেছে বাঙালি? ভক্তি শ্রদ্ধার চাইতে সেখানে অলঙ্কার কেনার হিড়িকই বেশি। এই অবাঙালি ধনতেরাসেরও কি হারিয়ে দেবে বাঙালি ভূত-চতুর্দশীর উত্তেজনাকে? উত্তরটা না হয় সময়ই দেবে। কিন্তু কিছু পুরনো আচার রীতি বাংলার ঐতিহ্য। আর তা বজায় রাখার দায়িত্ব বাঙালিদেরই। আবার আগের মতোই ঘরে ঘরে ফিরুক বাঙালি আচার ভূত চতুর্দশী।
Discussion about this post