‘মমি’ শব্দটি শুনলে প্রথমেই মনে পড়ে মিশরের কথা। তবে আমরা এখানে কোনো মিশরীয় মমির কথা বলবো না। আজ আমরা বলতে চলেছি একটি পেরুভিয়ান মমির কথা। যার বয়স প্রায় ৫০০ – ৬০০ বছর। পেরুতে মমি! অনেকেই হয়তো শুনে অবাক হচ্ছেন। তবে হ্যাঁ এটাই সত্যি। মমি তৈরির রীতিনীতি কেবল মিশরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। অন্যান্য সংস্কৃতিও যেমন – কানারি দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণ আমেরিকার কিছু অংশ, তাদের নিজস্ব মমি তৈরির পদ্ধতি বানিয়েছিল। আর দক্ষিণ আমেরিকার পেরুতে প্রাচীনকাল থেকেই মমি তৈরির রীতি প্রচলিত ছিল।
১৯৯৫ সালে প্রত্নতাত্ত্বিক জোহান রেইনহার্ড এবং তার সহকর্মী মিগুয়েল জারাতে পেরুর আন্দিজ পর্বতমালার মাউন্ট আম্পাটো শৃঙ্গ অভিযানে গিয়ে একটি পেরুভিয়ান মমি খুঁজে পান। এটিই এদেশে আবিষ্কৃত প্রথম মমি, যার নাম ‘হুয়ানিতা’। এরপর এখান থেকে আবিষ্কৃত হয় একের পর এক মমি। মিশরের মমিগুলির থেকে পেরুর মমি একটু আলাদা। কিন্তু তার কারণ কী? মিশরে যে মমিগুলি এখনও পর্যন্ত পাওয়া গেছে তাদের মৃত্যু হয়েছিল স্বাভাবিকভাবে। অন্যদিকে পেরুতে আবিষ্কৃত মমিদের ‘বলি’ দিয়েছিল প্রাচীন ইনকা সভ্যতার মানুষরা। ‘নরবলি’ ছিল ইনকা সভ্যতা ও সংস্কৃতির অন্যতম একটি রীতি।
‘হুয়ানিতা’-র ক্ষেত্রেও ঘটেছিল এই একই ঘটনা। ইনকাদের পালিত ‘ক্যাপাকোচা’ উৎসবে দেবতাদের নৈবেদ্য দেওয়া হত নরবলির মাধ্যমে। গবেষণার মাধ্যমে জানা যায়, শারীরিক দিক থেকে সবচেয়ে নিখুঁত ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হত বলির জন্য। বলির প্রায় এক বছর আগে থেকে তাদের খুব যত্নে রাখা হত। হুয়ানিতার ক্ষেত্রেও বলি দেওয়ার ঠিক একবছর আগেই বদলে গিয়েছিল তার যাপন ও খ্যাদাভ্যাস। গবেষকরা লক্ষ্য করেন, বলির এক বছর আগে থেকে মাংস, দুধ এবং ভুট্টা খাওয়া শুরু করেন হুয়ানিতা। যা মূলত ইনকাদের কাছে ছিল রাজকীয় খাদ্য। তাকে যখন বলি দেওয়া হয়েছিল তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২-১৫ বছর।
হুয়ানিতার পেটে পাওয়া গিয়েছিল একধরনের বিশেষ অ্যালকোহলজাতীয় পানীয়। অনুমান করা হয়, বলি দেওয়ার আগে এই ধরনের মাদক পান করিয়ে অজ্ঞান করা হত ইনকাদের। তারপর পাথর বা কাঠের তৈরি ভারী মুগুর দিয়ে মাথায় আঘাত করা হত। ভারী মুগুরের আঘাতেই ভেঙে গিয়েছিল হুয়ানিতার করোটি। ব্রেন হ্যামারেজ হয়েই মৃত্যু হয় তার। হুয়ানিতার সিটি স্ক্যান ও এক্স-রের ক্ষেত্রে ধরা পড়েছিল এই বিষয়টি। তারপর পর্বতচূড়ায় তার দেহ রেখে আসা হয়। ঠান্ডা পরিবেশ এবং তুষারপাতে এরপর প্রাকৃতিকভাবেই সংরক্ষিত হয়ে তার মৃতদেহ হয়ে ওঠে মমি। পেরুর এই ‘প্রথম মমি’ দেখতে আজও পর্যটকরা ভিড় জমান অম্পাটো শহরের নিকটবর্তী অরেকুইপার ‘মিউজেও সান্টুয়ারিওস অ্যান্ডিনোস’এ।
Discussion about this post