রঙের উৎসব দোলযাত্রা। উৎসব মুখর বাঙালি সারাবছর অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন রঙীন এই উৎসবের জন্য। বৈষ্ণব বিশ্বাস অনুযায়ী, দোলপূর্ণিমার দিন বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ, রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সঙ্গে রং খেলায় মেতেছিলেন। তবে মিষ্টি ছাড়া যেমন বাঙালির উৎসব প্রায় অসম্পূর্ণ, তেমনি দোল যাত্রাও তার ব্যতিক্রম নয়। রং খেলার পাশাপাশি, রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহের সামনে খিচুরি ও রকমারি মিষ্টির ভোগ দেওয়া হয়। এছাড়া ও পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে মিস্টি মুখের রেওয়াজও রয়েছে এই বিশেষ দিনে। তবে একটি মিষ্টির দাম কি এক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে? শুনতে অবাক লাগলেও, দোগাছিয়ার মদনমোহনের দোল-উৎসবের মেলায়, এই বিশাল সাইজের মিষ্টিই হল মেলার অন্যতম আকর্ষণ।
পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর অন্তর্গত দোগাছিয়া গ্রাম। জানা যায়, রায়চৌধুরি পরিবারের এই জনপ্রিয় দোল উৎসব প্রায় ৫৩৫ বছরের প্রাচীন। একসময় এটি পারিবারিক উৎসব রূপে পালিত হলেও ধীরে ধীরে এই উৎসব গ্রামের উৎসবে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর গ্রামের দোলমন্দিরে দোল পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বসে মেলা। এই মেলা ‘মিষ্টির মেলা’ নামেও পরিচিত। পাঁচ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দামের মিষ্টি বিক্রি হয় এই মেলাতে। এক হাতেও আঁটে না বড়ো একটি মিষ্টি, বরং তা দু’হাতে গামলা থেকে তুলতে হয়। বিশালাকার এই মিষ্টি দিয়ে দোগাছিয়া গ্রামে আত্মীয় আপ্যায়নের রেওয়াজ চলে আসছে গত কয়েকশো বছর ধরে।
রায়চৌধুরি পরিবার সূত্রে জানা যায়, মদনমোহন, গোপীনাথ, রাধাকৃষ্ণ, কেষ্টচন্দ্র ও দশমা নামে পাঁচটি বিগ্রহ তাঁদের পারিবারিক মন্দিরে গৃহদেবতা হিসেবে পূজিত হন। রীতি অনুযায়ী, দোলের সময় চার দিন ভোরে দশমা বিগ্রহ বাদে বাকি বিগ্রহগুলিকে এক এক দিন করে দোলমন্দিরে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকেই বিগ্রহকে দর্শন করে ভক্তরা। চলে আবির খেলা। পুজো শেষ হওয়ার পরে বিগ্রহকে রাতে আবার পারিবারিক মন্দিরে রেখে আসা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা কমিটির একজন সদস্য জানান, “কয়েকশো বছরের প্রাচীন দোগাছিয়ার মদনমোহনের দোল উৎসব। দোলেরদিন থেকে চারদিন চারিদিক থেকে বহু মানুষের সমাগম ঘটে এই মেলায়।”
প্রাচীন এই মেলায় চারদিন ধরে যাত্রাপালা, নাটক, বাউল গান ও সন্ধ্যায় আতসবাজির প্রদর্শনীর পাশাপাশি চলে নানান বিচিত্রানুষ্ঠান। মেলার একজন মিষ্টি ব্যাবসায়ীর মতে, “এই মেলাতে বিক্রি হওয়া একটি মিষ্টির কোনওটা একশো গ্রামের, তো কোনওটা পাঁচ কেজি ওজনের ছানায় তৈরী। সারাদিনে বিক্রী হয় প্রায় তিন থেকে চার লক্ষ টাকার পর্যন্ত মিষ্টি। পেল্লায় আকারের এক একটা মিষ্টি পুরো পরিবারের পেট ভরিয়ে দেয়।”
Discussion about this post