‘কারেন্ট নুন’, শুনলেই শুধু মনে কেন, মুখের ভেতরেও যেন পাওয়া যায় সেই স্বর্গীয় অনুভূতি। সেই কোন এক প্যাশনে কুঁচকে যাওয়া নাক চোখ, জিভের ডগায় চমক লাগানো চিড়বিড়ে সেই ইলেক্ট্রিক শক। বেশি খেয়ে ফেললে আবার ছাল ওঠা জিভ। তীব্র নোনতা আর টোকো স্বাদ নিয়ে সত্যিই যেন সে নুন কারেন্ট! সব মিলিয়ে কারেন্ট নুনকে মনে করলেই মুখ যায় জলে ভরে। বাড়িতে কারেন্ট না থাকলেও, মনের আহ্লাদের কারেন্ট জোগান দিত এই কারেন্ট নুন।
যদি প্রশ্ন ওঠে, খাবারে সবচেয়ে বেশি দরকারি সামগ্রী কোনটি? পাকা এবং রসিক রাঁধুনি আলবাত বলবেন ‘নুন’। কিন্তু মজার কথা হল, আমরা যে সাদা নুন দেখে অভ্যস্ত, এ নুন সে নুন নয়। এই নুন কালো কুচকুচে। বিক্রি হত তেঁতুল বা আলুকাবলির ঠেলা গাড়িতে। ছোটবেলায় অবশ্য বলা হত ওসব পেন্সিলের সিসের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি, বা ওতে অ্যাসিড আছে। কারণ, স্কুলবেলার এক টাকার পেপসি, হজমি গুলি, আচার, আলুকাবলি, তেঁতুলমাখা, কাঠি আইসক্রিম এসব ‘বাজে খাবারে’র লিস্টেই বড় করে নাম ছিল কারেন্ট নুনের। তাই স্বভাবতই বাড়ি থেকে বারণ তো থাকবেই। বারণের কারণ হিসেবে দেওয়া হত অকাট্য সমস্ত যুক্তি।
বর্তমানে অবশ্য বারণ করতে বা কারেন্ট নুন খাওয়ার ক্ষতি পরিমাপ করতে কাউকে দরকার হয়না। কারণ কারেন্ট নুন নিজেই হয়ে পড়েছে বড়ো দুর্লভ। কলকাতা শহরের নির্দিষ্ট কিছু কিছু জায়গায় পাওয়া যায়। ছোট বড় পুরিয়াতে করে বিক্রি হয় দশ টাকা, কুড়ি টাকা দামে ওজন দরে। দৈবাৎ কোনো ধেড়ে হয়ে যাওয়া মানুষ যদি সেই সব পুরিয়ার দেখা পান, ছোটবেলার সেই স্বাদ নিতেই যেন নেচে ওঠেন আনন্দে। শুরু হয় পুরনো স্মৃতিচারণ। নস্টালজিয়া!
Discussion about this post