বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসব শারদ উৎসব। আর এই উৎসবে দেবীকে নিবেদিত হয় ভোগ। এটাই উৎসবের একটা অন্যতম অঙ্গ। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পুজোর তিনদিনই ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের ভোগ দেওয়ার রীতি আছে। প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী শুধু মাত্র ব্রাক্ষণদেরই দেবীকে অন্নভোগ দেওয়ার অধিকার ছিল। কিন্তু কলকাতার বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজোর ইতিহাস খুব সুপ্রাচীন। এই পরিবারগুলো এখনও ভোগের ব্যপারে নিজেদের প্রাচীন ধারাকে সযত্নে ধরে রাখার চেষ্টা করে।
যেমন ধরুন মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব তাঁর শোভাবাজার বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন ১৭৭৪ সালে। লর্ড ক্লাইভ ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা সেখানে উপস্থিত হতেন। থাকত এলাহি খাবার আর আমোদের ব্যবস্থা।এই বাড়ির পুজোয় অন্ন ভোগ না হলেও বামন ঠাকুরের হাতে নানা মিষ্টি আর নোনতা স্বাদের পদ নিবেদিত হত মা দুর্গার জন্য। মিঠে গজা, চৌকো গজা, বালুসাই, দরবেশ,পান্তুয়া, নারকেল ছাপা মিষ্টি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া থাকত দারচিনির গন্ধে ভরা ক্ষীরের পুর দেওয়া প্যারাকি, কটকটি, গরম সিঙ্গাড়া, নিমকি, রাধাবল্লভী আর মিষ্টি হিসেবে মতিচুরের লাড্ডু। পুজোর ভোগে একমাত্র বাড়ির সদস্যদের অধিকার ছিল। কিন্তু অতিথিদের জন্য যত্ন সহকারে লুচি, আলুর দম, মিষ্টির ব্যবস্থা থাকত।
সুগন্ধি চাল আর ফলের নৈবেদ্যের সঙ্গে নারকেল,ক্ষীর দিয়ে এই বাড়ির বিশেষ মিষ্টি ‘আগা’ সাজিয়ে দেওয়া হয় নৈবেদ্যের উপর। সন্ধ্যায় দেওয়া হয় মিছরি ভোগ। ষষ্ঠী আর সপ্তমীতে এই বাড়ির মহিলারা লুচি তরকারি খান। আর বৈধব্য যোগ যারা পালন করে তারা তিনদিনই লুচি তরকারি খান। ঠাকুরের ভোগ এখানে ‘ভাজাঘরে’ তৈরী হয়। বৈচিত্র্যের প্রাসঙ্গিকতায় পুরানো কলকাতার বুকে ছিল পার্বণ আর ভোজন এক মহামিলন যা যুগের পর যুগ আজও বিদ্যমান।
Discussion about this post