বাঙালির দ্বারা ব্যবসা হয় না। এ কথা শোনেনি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে চিরাচরিত এই কথাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে বঙ্গ তনয়া অঙ্কিতি বসু। সাফল্যের শিখরে পৌঁছে তার দীপ্তি আজ বিদেশের দরবার আলোকিত করছে। বাঙালি পরিবারে জন্ম হলেও তার বেড়ে ওঠা মুম্বইতে। ২০১২ সালে মুম্বইয়ের সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে পাশ করেন অঙ্কিতি। বিষয় ছিল অর্থনীতি এবং গণিত।
তবে শুধু বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা নয়, ব্যবসায় সমান প্রয়োজন ইচ্ছাশক্তি আর ধৈর্যের। তাদের দোসর করেই শুরুতে মাত্র ২১ লক্ষ টাকা নিয়ে চালু করেন ব্যবসা। যা আজ এসে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮০০ কোটিতে। মাত্র সাতাশ বছর বয়সে তার এই সাফল্য মুগ্ধ করে প্রতি বাঙালিকে। তেইশ বছর বয়সে ব্যাঙ্গালোরে পড়তে গিয়ে তার আলাপ ধ্রুবের সাথে। ধ্রুব তখন আইআইটি গোয়াহাটি থেকে সদ্য পাশ করে গেমিং স্টুডিও কিউয়ি আইএনসি-তে কর্মরত। দুজনেরই ইচ্ছে নিজেদের মতো কিছু করার। তাই প্রথমে ই-কমার্স সাইট খোলার কথা ভাবেন তারা। তবে ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজনের মতো সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতার কথা ভেবে কাজের ভাবনা বিশ্রাম নেয়।
সে বছরই ব্যাঙ্কক বেড়াতে গিয়ে অঙ্কিতির নজর কাড়ে চতুচক বাজার। বাজার ঠিক নয় অবশ্য, বাজারে থাকা স্থানীয় মানুষের হাতের কাজ। ব্যাগ, জুতো, পোশাক ইত্যাদি নানান জিনিস। ভাষার সমস্যা থাকায় স্থানীয় লোকেরা বাইরে পৌঁছে দিতে পারেন না তাদের তৈরি জিনিস। ফিরে গিয়ে ধ্রুবের সঙ্গে এবিষয়ে আলোচনা করেই তাদের নতুন যাত্রা শুরু। এর পরই গড়ে ওঠে তাদের ফ্যাশন ই-কমার্স সংস্থা জিলিঙ্গো।
পথ চলা শুরু। তবে এ পথ খুব একটা মসৃণ ছিল না। মার্কেট রিসার্চ করতেই তাঁদের সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। এ ছাড়াও ছিল ঘুরে ঘুরে অনলাইন ব্যবসার প্রতি ব্যবসায়ীদের আগ্রহ জাগিয়ে তোলা। এ দিকটা অঙ্কিতি সামলালে প্রযুক্তির দিকে ছিল ধ্রুব। দক্ষিণ এশিয়ার বাজারগুলোই মূলত টার্গেট ছিল তাদের। গত চার বছরে সে টার্গেট পূর্ন হয়েছে বৈকি। আগে যে সেকোয়া কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন অঙ্কিতি, আজ তারাও জিলিঙ্গোতে বিনিয়োগ করেছেন প্রায় ২২ কোটি ৬০ লক্ষ মার্কিন ডলার। বর্তমানে জিলিঙ্গোর সিঙ্গাপুরের সংস্থার সিইও অঙ্কিতি। আর ধ্রুব রয়েছেন ব্যাঙ্গালোরের দপ্তরে।সেখানে ১০০ জন কর্মীকে নেতৃত্ব দেন তিনি।
Discussion about this post