যুদ্ধ-বিগ্রহের ইতিহাস জানতে ভালোবাসে অথচ গ্ল্যাডিয়েটরদের নাম শোনে নি, এমন মানুষ সম্ভবত খুঁজে পাওয়া বেশ কঠিনই হবে। রোমান সাম্রাজ্য এবং রোমান প্রজাতন্ত্রের সুপরিচিত এ যোদ্ধারা লড়াইয়ে লিপ্ত হতো নিজেদের সাথে, লড়াই করতো বাঘ, সিংহ, হাতির মতো হিংস্র পশুদের সঙ্গেও!
আজকের দিনে আমরা যেমন টেলিভিশনে দ্য রক, জন সিনা কিংবা সদ্য অবসর নেওয়া আন্ডারটেকারদের রেসলিং দেখে আনন্দ পাই। ঠিক তেমনই প্রাচীনকালে বিনোদনের উদ্দেশ্যে কলোসিয়ামে আগমন ঘটতো রোমের জনসাধারণের। তবে হাল আমলের রেসলিংয়ে যেমন সব ফলাফলই আগে থেকে নির্ধারণ করা থাকে, গ্ল্যাডিয়েটরদের বেলায় এমনটা হতো না। তারা সত্যিকারের লড়াই করতেই যুদ্ধ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতো। বীরের মতো লড়াই করতে করতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়তো কিংবা বিজয়ীর বেশে সেখান থেকে বেরিয়ে যেত।
গ্ল্যাডিয়েটররা ছিলেন প্রাচীন পৃথিবীর মহাতারকা, তাই রোমান সাম্রাজ্যে উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে এই যোদ্ধাদের খুবই কদর ছিল। এমনকি তারা আজকের আধুনিক যুগের ক্রীড়াবিদদের মতোই বিভিন্ন পণ্য দ্রব্যের প্রচার করত। বিভিন্ন স্থানে ঝোলানো হত তাদের ছবি, বাচ্চারা বিভিন্ন জনপ্রিয় গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রতিকৃতি তৈরী করে খেলা করত। এরূপ একজন জনপ্রিয় গ্ল্যাডিয়েটর ছিলেন কারপোফোরাস। বীরত্বের অসাধারণ নজির স্থাপন করে খালি হাতে তিনি ২০টি প্রাণীকে পরাস্ত করেছিলেন। এই সমস্ত বীর গ্ল্যাডিয়েটরদেরই খোঁজে থাকতেন প্রাচীন যুগের বণিক সম্প্রদায়, যারা ন্যায্য মূল্য দিয়ে তাদের পণ দ্রব্যের প্রচার করাতেন।
তবে এই তারকাখচিত জীবনের শেষ কিন্তু এখানেই নয়, এই সমস্ত জনপ্রিয় গ্ল্যাডিয়েটরদের ছিল বহু মহিলা অনুগামী। কোনো কোনো মহিলা অনুগামী এতটাই ভক্ত ছিলেন যে, নিজেদের বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্ৰী মৃত গ্ল্যাডিয়েটরদের রক্তে রাঙিয়ে তারপরে সেটি ব্যাবহার করতেন। যোদ্ধাদের ঘাম এবং রক্তের উপর ভিত্তি করে মহিলারা একটি অদ্ভুত ‘সুগন্ধী’ প্রসাধনী প্রস্তুত করতেন। তবে তথাকথিত এই তারকাখচিত জীবনের বাইরে তাদের সামাজিক জীবন কিন্তু বিশেষ কিছু সুখকর ছিল না। তাদের সামাজিক কদর থাকলেও সামাজিক এবং আইন বিষয়ক প্রাধান্য ছিল না। এমনকি তারা যুদ্ধক্ষেত্রে নির্মম ভাবে মৃত্যু বরণ করে নেওয়ার পরেও তাদের সঠিকভাবে অন্তিম ক্রিয়া পর্যন্ত করা হত না। গ্ল্যাডিয়েটর হিসেবে কোনো প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ তাদের ছিলো না। বরং নিষ্ঠুর মৃত্যুবরণ করে দর্শকদের আনন্দ দেওয়াই ছিলো তাদের একমাত্র নিয়তি!
অপমানজনক ও যন্ত্রণাদায়ক এক মৃত্যুর মুখোমুখি করতে তাদের ছেড়ে দেওয়া হতো একজন দক্ষ তীরন্দাজদের সামনে। সেই তীরন্দাজদের নির্ভুল নিশানার হাত থেকে নিজেকে কোনোক্রমে বাঁচানোই ছিলো তার মূল লক্ষ্য। আবার কখনও কখনও তাদের এমন হেলমেট পরানো হত যাতে চোখের জায়গাটাও থাকতো বন্ধ। ফলে দর্শকেরা যেভাবে বলতো, সেভাবেই চলতে চলতে প্রাণ দিত এই বীরযোদ্ধারা। ইতিহাসের পাতায় যা শুধুই স্থান পেয়েছিল বিনোদনের মাধ্যম হিসাবে, তা ছিল আদতে ছিল এক পৈশাচিক মৃত্যুর খেলা!
Discussion about this post